Wednesday, April 26, 2023

Factors of Population change (জনসংখ্যা পরিবর্তনের কারন সমুহ)

জনসংখ্যা ভূগোল এর একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হল জনসংখ্যার পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনা। জনসংখ্যা একটি অতি পরিবর্তনশীল বিষয় এবং স্থান-কাল ভেদে স্থান প্রতিমুহূর্তে এটি পরিবর্তিত হচ্ছে। জনসংখ্যার এই পরিবর্তন কে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

. স্বাভাবিক বৃদ্ধি (Natural growth)- যখন জনসংখ্যা জন্ম মৃত্যু হারের পার্থক্যের জন্য স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায় তখন তাকে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির বলে।

. প্ররোচরিত বৃদ্ধি (Induced growth)- যখন কোন স্থানের জনসংখ্যা মাইগ্রেশনের কারণে বৃদ্ধি পায়, তখন তাকে induced growth বলে।

তবে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে, বা কোন দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অংশের মধ্যে জনসংখ্যার পরিবর্তনের হার একরকম নয়। এর পেছনে যে কারণগুলো দায়ী সেগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এগুলির সম্মিলিত প্রভাবেই কোন দেশের জনসংখ্যা হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়। হ্রাস পেলে তাকে ঋণাত্মক বৃদ্ধি এবং বৃদ্ধি পেলে তাকে ধনাত্মক জনসংখ্যা বৃদ্ধি বলে। যে কোন দেশের জনতাত্ত্বিক বিষয়গুলি (demographic characteristics) এই তিনটি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। 

A. Fertility বা প্রজনন

B. Mortality বা মৃত্যু এবং

C.  Migration বা পরিব্রাজন। 

A. Fertility: জনসংখ্যার পরিবর্তনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হলো প্রজনন। যে কোন দেশের জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি তার হার নির্ভর করে প্রজনন হারের উপর। প্রজনন (Fertility) বলতে বোঝায়, "occurrence of birth, or process of giving live birth" অর্থাৎ জন্মদানের প্রক্রিয়াকেই প্রজনন বলে। তবে এই প্রজনন নির্ভর করে প্রজনন ক্ষমতা বা fecundity সহ বিভিন্ন bioloogical, socio-cultural নিয়ন্ত্রক এর উপর। 

Fertility একটি বহুমুখী বিষয় এবং বিভিন্ন দিক থেকে তাই একে পরিমাপ করা হয়। প্রজননের চরিত্রটি বুঝতে হলে, এবং জনসংখ্যার পরিবর্তনের উপরে এর প্রভাব বুঝতে হলে বহুমুখী পরিমাপ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। নিচে প্রজননের বহুবিধ পরিমাপ গুলি উল্লেখ করা হলো।


Fertility and population change:

জন্মহার বা প্রজনন জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য দায়ী। উচ্চ প্রজনন এর ফলে জনসংখ্যার বয়স কাঠামো পরিবর্তন ঘটে। সাধারণত উচ্চ প্রজনন এর ফলে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয় এবং শিশু কিশোর জনসংখ্যা বেশি থাকে। ফলে জনসংখ্যা পিরামিড এর ভূমি প্রশস্ত হয়। অধিক জন্মহারের কারণে যে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে সেটাকে fertility induced population growth বলে।

B. Mortality: জনসংখ্যা পরিবর্তনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মৃত্যু। মৃত্যু বলতে বোঝায় জীবদেহের জৈবনিক ক্রিয়া কর্মের পরিসমাপ্তি (disappearance of all evidences of life)

সাধারণতঃ জন্মহার মৃত্যুহার এর পার্থক্য জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি কে সূচিত করে। মৃত্যু হারের তুলনায় জন্মহার বেশী হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ধনাত্মক হয়, জন্মহার এর তুলনায় মৃত্যুহার বেশি হলে জনসংখ্যার বৃদ্ধির ঋণাত্মক হয়। যদিও মৃত্যু একটি স্বাভাবিক তথাপি প্রজননের মত এর চরিত্র বহুমুখী। তাই মৃত্যুর বহুমুখী দিক বুঝতে হলে এবং জনসংখ্যার পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে হলে এর বিভিন্ন পরিমাপ গুলি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। 


Mortality and population change:

জনসংখ্যা বৃদ্ধির উপর মৃত্যুহারের প্রভাব অপরিসীম। মৃত্যুহার বেশি হলে এবং তা যদি জন্মহার এর সঙ্গে ভারসাম্যে থাকে তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয় না। কিন্তু মৃত্যুহার অস্বাভাবিক কমে গেলে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তখন জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির কে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ নামে আখ্যায়িত করা হয়। যখন মৃত্যুহার কমে যাওয়ার কারণে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে তখন সেই বৃদ্ধিকে mortality induced growth বলে। 

তবে যেহেতু মৃত্যুহার বিভিন্ন বয়স লিঙ্গের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয় এবং তার প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পড়ে জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্যের উপর। যেমন শিশু মৃত্যুর হার অধিক হলে তা জন্মহার কে উৎসাহিত করে। বৃদ্ধ জনসংখ্যার অধিক মৃত্যু হলে জনসংখ্যা পিরামিড এর শীর্ষ দেশ দ্রুত সংকীর্ণ হয়। 


C. Migration: পরিব্রাজন কে জনসংখ্যা পরিবর্তনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখানো হয় এবং এটি জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য দায়ী নয় বরং জনসংখ্যার induced growth এর জন্য দায়ী। পরিব্রাজন বলতে বোঝায় 'মানুষ যখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গাতে গমন করে নতুন জায়গাতে স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে বসবাস করে।

Types of migration

পরিব্রাজন নানা প্রকার হয়। 

  1. অন্তরদেশীয় (গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে শহর, ইত্যাদি), 

  2. আন্তর্জাতিক

  3. স্বল্পস্থায়ী  

  4. দীর্ঘস্থায়ী

  5. ঋতুভিত্তিক ইত্যাদি।


Factors of migration

নানা কারণে পরিব্রাজন সংঘটিত হয়। এই সমস্ত কারণ গুলিকে দুটি শ্রেনীতে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।

I. Push factors- এই কারণগুলি মানুষকে তার দীর্ঘদিনের বসবাসের স্থান ছাড়তে বাধ্য করে। তাই এই কারণগুলোকে পরিব্রাজনের ঋণাত্মক কারণে বলা হয়ে থাকে। যেমন

. Economic- দারিদ্র বেকারত্ব, আয় বৃদ্ধির অভাব, নতুন জীবিকার অভাব, কম মজুরি

. Demographic- অধিক জনঘনত্ব

. Socio-cultural- শিক্ষার সুযোগের অভাব, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাব, সামাজিক অস্থিরতা, জাতিগত বৈষম্য, দাঙ্গা

. Environmental- অস্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক পরিবেশ, প্রাকৃতিক দূষণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ, রুক্ষ জলবায়ু

. Political- রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংঘর্ষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ

II. Pull factors- এই কারণ গুলো মানুষকে কোন জায়গাতে বসবাসের উদ্দেশ্যে আকর্ষণ করে। তাই এই কারণগুলো কি পরিব্রাজনের ধনাত্মক কারণ বলা হয়ে থাকে। যেমন,

. Economic- নতুন স্থায়ী জীবিকার সুযোগ, উচ্চ মুজুরী, উচ্চ জীবনযাত্রার হাতছানি

. Demographic- স্বল্প জনঘনত্ব,

. Socio-cultural- শিক্ষার সুযোগ, উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, সামাজিক স্থিরতা সাম্য, বিনোদনের সুযোগ,

. Environmental- দূষণমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ

. Political- দুর্নীতিহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা


Migration and population change:

পরিব্রাজন হলে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে পাশাপাশি বিভিন্ন জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের উপরে কেমন বয়স লিঙ্গ গঠন, ইত্যাদি উপরে প্রভাব দেখা যায়। 

পরিব্রাজন জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি তার ফলে সৃষ্ট জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের উপরে প্রভাব বিস্তার করে। যেমন স্বাধীনতার পরে ভারতবর্ষের সীমান্তবর্তী জেলা গুলিতে আন্তর্জাতিক পরিব্রাজন এর ফলে সেখানকার জনঘনত্ব, বয়স লিঙ্গ গঠন, জাতিগত কাঠামো পরিবর্তিত হয়েছিল। এই সমস্ত জেলাগুলিতে জনসংখ্যা অধিক বৃদ্ধি পেয়েছিল। একটা হিসাব মতে (২০১১) প্রায় 5 মিলিয়ন মানুষ ভারতবর্ষে এসেছেন। ভারতের অভ্যন্তরে প্রায় 46 কোটি মানুষ পরিব্রাজন করে থাকে 


গ্রামীণ অঞ্চলে বিবাহের (৬৫%) কারণে মহিলাদের পরিব্রাজন ঘটে যার জনতাত্ত্বিক প্রভাব সামান্যই। তবে গ্রামের পুরুষ যুবক সম্প্রদায় কাজের উদ্দেশ্যে (৪০%) অন্যত্র পরিব্রজন করলে গ্রামের বয়স লিঙ্গ গঠনে তার প্রভাব পড়ে। যেমন পশ্চিমবঙ্গ (মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দক্ষিণ ২৪ পরগনা ইত্যাদি),  বিহার, উড়িষ্যার বিভিন্ন গ্রাম থেকে বহু মানুষ বিশেষ করে যুবক সম্প্রদায় কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বিদেশের বিভিন্ন অংশে পরিব্রাজন করে থাকে। 

কিন্তু যেহেতু শহর সবচেয়ে বেশি পরিব্রাজনের সম্মুখীন হয় তাই শহরে জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের উপর বেশি প্রভাব পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে প্রধানত যুবক পুরুষ জনসংখ্যার পরিব্রাজন বেশি হয় যার ফলে শহরে লিঙ্গ বয়স গঠনের পরিবর্তন ঘটায়। যেমন ভারতবর্ষের মেট্রো শহরগুলিতে (দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বাই) দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রধানত পুরুষ যুব সম্প্রদায় কর্মের উদ্দেশ্যে ভীড় করার ফলে সেখানকার জনঘনত্বজনসাস্থ, এবং বয়স লিঙ্গ গঠনে প্রভাব বিস্তার করে। 

No comments:

Post a Comment