Friday, April 07, 2023

Types of Rural Settlement: Rural Settlement morphology (গ্রামীণ জনবসতির প্রকার)

 


একাধিক বাড়ির সমন্বয় একটি জনবসতি তৈরি হয় এবং বাড়িগুলি পারস্পরিক দূরত্ব জনবসতির আলোচনায় গুরুত্ব পায়। কারণ বাড়িগুলির পারস্পরিক দূরত্ব বলে দেয় যে জনবসতি একটি নির্দিষ্ট স্থানে কেন্দ্রীভূত নাকি ছড়িয়ে অবস্থান করছে। 

গ্রামীণ জনবসতির কায়িক গঠন আলোচনায় এই বসতবাড়ির মধ্যে দূরত্ব বা জনবসতি গোষ্ঠীর মধ্যে দূরত্ব জনবসতির প্রকার (types) হিসেবে আলোচিত হয়। 

Settlement Types বা গ্রামীণ জনবসতির প্রকার বলতে বোঝায় ভূপৃষ্ঠের উপরে অবস্থিত বাড়িগুলির পারস্পরিক দূরত্ব বা বসতবাড়ি গোষ্ঠীর (cluster of residential buildings) মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব যা তাদের ভূপৃষ্ঠের উপরে আপেক্ষিক বন্টন কে নির্দেশ করে। 

জনবসতির প্রকার প্রকৃতপক্ষে কোন সম্প্রদায়ের ভূপৃষ্ঠের উপরে দৈশিক প্রকাশ কে সূচিত করে যা ওই সম্প্রদায়ের সামাজিক গঠন সম্পদের উপলব্ধিকে নির্দেশ করে।


জনবসতির types কি ভাবে নির্ধারিত করা হবে সে বিষয়ে নানা গুণগত পরিমাণগত পদ্ধতি আছে। একটি সহজ পরিমাণগত পদ্ধতি হল Nearest Neighbour Analysis

এই পদ্ধতিতে জনবসতি বা বাড়ি গুলির মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব পরিমাপ করে বের করা হয় যে সেই জনবসতির type কি হবে। এক্ষেত্রে একটি তাত্ত্বিক বন্টন (theoritical random distribution) থেকে জনবসতির প্রকৃত বন্টন কতটা পৃথক তার উপর ভিত্তি করে ঠিক করা হবে সেই জনবসতি গোষ্ঠীবদ্ধ (Nucleated or Clustered) হবে না সম দুরত্ব যুক্ত (Uniform or Regular) হবে।


এখানে একটা কথা বলা দরকার যে, জনবসতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে গড়ে ওঠে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক সাংস্কৃতিক তথা সামাজিক বিষয় ক্ষেত্রে ভূমিকা নেয়। 

প্রাকৃতিক বিষয়গুলির মধ্যে ভূপ্রকৃতি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। 

দ্বিতীয় প্রাকৃতিক বিষয়টি হলো জলের উৎস 

এছাড়া প্রকৃতি, অর্থনৈতিক চরিত্র, সামাজিক সম্পর্ক ও সামাজিক গঠন ইত্যাদি জনবসতির types কে নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রকৃত গোষ্ঠীবদ্ধ (True clustered) বা প্রকৃত বিক্ষিপ্ত (True dispersed) ছাড়াও অর্ধ গোষ্ঠীবদ্ধ, লম্বাটে, অর্ধচন্দ্রাকার দীর্ঘ জনবসতি দেখা যায়। প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন কারণে তৈরি হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে পরিমাপ করা সম্ভব হয়না যে সেই জনবসতিকে গোষ্ঠীবদ্ধ বলা হবে না বিক্ষিপ্ত বলা হবে।

পাঞ্জাব সমভূমির গ্রামগুলিকে দেখলে বোঝা যায় যে সেখানে প্রাই সম দূরত্বে সঙ্ঘবদ্ধ একেকটি গ্রাম বন্টিত। রাস্তাগুলো প্রায় কেন্দ্র বহির্মুখী ভাবে বিস্তৃত হয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুলির সঙ্গে সংযুক্ত। গ্রামগুলোর মাঝখানে অবস্থান করছে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। এখানে প্রতিটি গ্রামের বাড়িগুলি খুব কাছাকাছি বিস্তৃত যা তাদের গোষ্ঠীবদ্ধ প্রকৃতিকে সহজেই প্রমাণ করে। কিন্তু সমগ্র পাঞ্জাব সমভূমির সাপেক্ষে দেখলে গ্রাম গুলোর মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব একটি প্রায় ইউনিফর্ম বন্টন তৈরি করেছে সেটা বোঝা যায়।

আবার গাঙ্গেয় সমভূমির বদ্বীপ অংশে যেখানে অসংখ্য নদী বাঁক রয়েছে সেখানে আবার লম্বাটে অর্ধচন্দ্রাকার জনবসতি গড়ে উঠেছে ওই সমস্ত নদীর স্বাভাবিক বাঁধের উপরে যা তাদের বিশেষ অর্ধ গোষ্ঠীবদ্ধ রূপ কে পরিস্ফুট করে।

রাজস্থানের যোধপুর জেলার গ্রামীণ জনবসতি গুলি ক্ষুদ্র আয়াতকার গোষ্ঠীবদ্ধ। আবার কেরালা উপকূলের জনবসতি গুলি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিক্ষিপ্ত বাড়ি বা বাড়ি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে। 

উদাহরণ

বসতবাড়ির বা বসতবাড়ি গোষ্ঠীর পারস্পরিক দূরত্বের উপর নির্ভর করে জনগোষ্ঠীকে প্রধানত দুটি চরম ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল,

. গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি (clustered or nucleated)

. বিক্ষিপ্ত জনবসতি (scattered or dispersed)

এছাড়া অনেক ভৌগলিক আরো কয়েকটি জনবসতির প্রকারের কথা বলেছেন। যেমন E. Ahamed বলেছেন Fragmented এবং cluster hamlet ধরনের। আবার Dasgupta Mishra উপ গোষ্ঠীবদ্ধ (semi clustered) এবং hamlated জনবসতির কথা বলেন। 

উল্লেখ্য, জনবসতি প্রকৃত গোষ্ঠীবদ্ধ বা প্রকৃত বিক্ষিপ্ত সবসময় যে হবে তা নয়। বরং এর মাঝে মাঝে নানা ধরনের প্রকার দেখা যায়। 

. গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতিঃ 

যখন বসতবাড়ি গুলির মধ্যে বা বসতবাড়ি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব অল্প হয় এবং ফাঁকা জায়গা কৃষি জমি বসতবাড়ি থেকে বাইরে অবস্থান করে তখন তাকে গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি বলে। রাস্তা সংখ্যা বেশি থাকে এবং দেখে মনে হয় স্নায়ুতন্ত্র তৈরি করেছে। একটানা শুধু বসতি অঞ্চল থাকে, এবং হঠাত ই জনবসতি এলাকা শেষ হয়ে কৃষি এলাকা ও অন্যান্ন ফাকা এলাকা সুরু হয়। 

সাধারণত এই ধরনের জনবসতি আকাশ থেকে বা মানচিত্রে দেখলে সঙ্ঘবদ্ধ আকৃতির দেখায় যার চারপাশে ফাঁকা জায়গা থাকে, সেটা কৃষিজমি বা অন্যকিছু হতে পারে। 

গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি সাধারণত কোন একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় আকর্ষণ যুক্ত স্থানকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে গড়ে ওঠে।

কারণ:

  • গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি সাধারণত কোন একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় আকর্ষণ যুক্ত স্থানকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে গড়ে ওঠে।

  • আবার বাজার বা উন্নত ব্যবসায়ীক জায়গা কে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি সহজেই গড়ে ওঠে। 

  • পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে জায়গা কম থাকে সেখানে অল্প জায়গার মধ্যে একসঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়। 

  • যে সমস্ত অঞ্চলে পানীয় জলের অভাব সেখানে জলাশয় বা কুপ কে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে ওঠে। 

  • প্লাবনভূমি অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠার সুযোগ থাকেনা। তাই মুল বসতি প্লাবন রেখার উপরে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে থাকে, বা স্বাভাবিক বাঁধের উপরে তৈরি হয়। 

  • নদী গঠিত সমভূমি অঞ্চলে যেখানে প্রগাঢ় কৃষির প্রচলন রয়েছে সেখানে গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে ওঠে।

  • গাঙ্গেয় সমভূমির পশ্চিমের রাঢ় সমভূমি অঞ্চলে  গ্রামগুলি সঙ্ঘবদ্ধ গ্রুপে গড়ে উঠেছে এবং গ্রাম গুলোর মধ্যে কৃষি জমি বা অন্যান্য ভূমি ব্যবহার গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে মৃত্তিকা জলের উৎস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। 

  • যে সমস্ত অঞ্চলে নিরাপত্তার প্রশ্ন থাকে সেখানে গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে ওঠে।

  • গাঙ্গেয় সমভূমি তে আগেকার দিনে গ্রামগুলিতে নানারকম নিরাপত্তার অভাব থাকায় গোষ্ঠীবদ্ধ আকৃতি নিয়েছিল। পরবর্তীতে রাস্তাঘাটের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার অভাব দূর হলে ড্রামের ভেতর থেকে মানুষ রাস্তার ধারে এসে ছোট ছোট বাড়ি গোষ্ঠী তৈরি করে জনবসতি গড়ে তোলে ফলে এককালের গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি অর্ধ গোষ্ঠীবদ্ধ বা hamlated হয়ে পড়ে। 



. বিক্ষিপ্ত জনবসতিঃ 

যখন বসতবাড়ি গুলির মধ্যে বা বসতবাড়ি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব বেশি হয় এবং ফাঁকা জায়গা কৃষি জমি বসতবাড়ি গুলির মধ্যে মধ্যে অবস্থান করে তখন তাকে বিক্ষিপ্ত জনবসতি বলে। এক্ষেত্রে রাস্তার সংখ্যা কম হয় এবং বসতি এলাকা ও উন্মুক্ত এলাকার মধ্যে সিমারেখা টানা যায়না। 

কারণ

  • সাধারণত বন্ধুর ভূ-প্রকৃতি যুক্ত অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে। ঝাড়খণ্ডের অনুন্নত মালভূমি অংশে এরকম জনবসতি দেখা যায়। এখানে ছোট ছোট বসতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিস্তৃত। 

  • আবার যদি জলের উৎস সর্বত্র পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়।

  • অনেক সময় গ্রামীণ সমাজে অনেকগুলি জাতি একসঙ্গে থাকলে এবং অস্পৃশ্যতা বা বৈষম্য থাকলে একেকটি সম্প্রদায় এক একটি অংশে বসবাস করে ফলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি তৈরি করে। 

  • অনেক সময় প্রধান জাতির বসতি গোষ্ঠীবদ্ধ ধরনের হয় এবং নিচু জাতের জনগোষ্ঠী একটু দূরে বসে তৈরি করে ফলে বিচ্ছিন্ন (hamlated) জনবসতি তৈরি করে।

  • পৃথিবীর স্বল্প জনঘনত্ব যুক্ত দেশগুলিতে যেখানে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক কৃষি প্রচলিত সেখানে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে। 

  • দক্ষিণ ভারতের কেরালা, পশ্চিমঘাট ইত্যাদি অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি দেখা যায় সেখানকার ভূ-প্রকৃতি বিশেষ কৃষি ব্যবস্থা জন্য। 

  • কর্নাটকের কদাগু জেলাতে গ্রামের ধারণাটি নেই। সেখানে এক একটি পরিবার আলাদা আলাদা নিজও নিজও কৃষিজমি সংলগ্ন অঞ্চলে বসতি গড়ে তুলেছে। 

  • যে সমস্ত অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা নেই সেখানে বিক্ষিপ্ত অর্ধ গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি চোখে পড়ে। 

. হ্যামলেট জনবসতি (hamlated)

মূল বসতি এলাকা থেকে কিছুটা দূরে অল্প কিছু বাড়ি নিয়ে যে জনবসতি তৈরি হয় তাকে হ্যামলেট জনবসতি বলে। ধরনের জনবসতি ক্ষুদ্র, মূল বসতি থেকে দূরে, স্বল্প যোগাযোগব্যবস্থা পূর্ণ এলাকাতে গড়ে ওঠে। এই সমস্ত জনবসতিতে সেরকম কোন সুযোগ সুবিধা বা পরিষেবা থাকেনা। একটিমাত্র সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে।

কারণঃ 

নানা কারণে এই ধরনের জনবসতি গড়ে ওঠে। যেমন বন্ধুর ভূপ্রকৃতি, অনুর্বর মৃত্তিকা, সামাজিক বৈষম্য অস্পৃশ্যতা, ভৌম জলের অভাব যুক্ত এলাকা, ইত্যাদি।





No comments:

Post a Comment