আমরা সবাই জানি যে ইতিমধ্যেই ভারতবর্ষে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ লাগু হয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান শিক্ষাবর্ষ থেকে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এটি লাগু হতে চলেছে। ভারতবর্ষের শিক্ষা নীতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকামী পদক্ষেপ যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিটি ধাপে বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন গ্রহণ করা হয়েছে এবং ভোকেশনাল অর্থাৎ দক্ষতা বৃদ্ধি মূলক শিক্ষার উপরে গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করা হয়েছে।
যে কোন দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন প্রচুর কর্মদক্ষতা সম্পন্ন যুব সমাজ। আর যুব সমাজের মধ্যে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে ভোকেশনাল এবং বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা। বর্তমান শিক্ষানীতি তে এই বিষয়টিকে সব থেকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে।
ভারতবর্ষে মহাবিদ্যালয় স্তর এর নিচে বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থায় যে ভোকেশনাল শিক্ষার প্রচলন ছিল সেটি জনপ্রিয় না হওয়ায় সাধারণ জনগণ সেখান থেকে প্রায়ই মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল এতদিন। যার ফলে বিরাট সংখ্যক যুবসমাজ সাধারণ ডিগ্রি শিক্ষা নিয়ে কোনরকম দক্ষতা ছাড়াই বহু বছর ধরে চাকরির বাজারে প্রবেশ করে আসছে। ফলস্বরূপ বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্রে চাকরির প্রতিযোগিতা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে।
অন্যদিকে ইঞ্জনিয়ারিং কলেজ থেকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত যুবসমাজ ও স্বল্প থেকে মাঝারি দক্ষতা নিয়ে বেরিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সেক্টরে স্বল্প বেতনে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ওই সব যুবক যুবতী উচ্চ দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তারা under employed থাকছে।
ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষার সবথেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ দিক সেটা হল যুবসমাজের মধ্যে বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি যাতে করে তারা একটা দক্ষতা নিয়ে চাকরির বাজারে বা স্বনির্ভরতার বাজারে প্রবেশ করে চাকরি পেতে পারে বা নিজে স্বনির্ভর হতে পারে।
দক্ষতা ছাড়া কিন্তু বর্তমান সময়ে টিকে থাকা কষ্টকর। বর্তমান যুগটাই হচ্ছে স্কিলের যুগ। ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রচুর দক্ষ ছেলে-মেয়েদের চাহিদা প্রতিমুহূর্তে তৈরি হচ্ছে। সুযোগ রয়েছে অন্যান্য কারিগরী দক্ষতা নিয়ে স্বনির্ভর হওয়ারও। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফলে ভারতীয় যুবসমাজ গতানুগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কোনরকম দক্ষতা না নিয়েই চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। ফলে তাদের কাছে সরকারি চাকরির দরজা ছাড়া বিরাট সম্ভাবনাময় আধুনিক শিল্প ব্যবস্থায় তারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না বা স্বনির্ভর হতে পারছে না।
তাই এখানে নতুন অভিভাবক অভিভাবিক তাদের প্রতি আমার উপদেশ, আপনারা কারিগরি শিক্ষামুখী করে ছেলেমেয়েদেরকে গড়ে তুলুন যাতে করে তারা সুনির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে পারে স্কুল স্তরে পড়াশুনোর সময়ই। সাধারণ গতানুগতিক বিষয় নিয়ে পড়াশুনা না করে অসংখ্য কারিগরী বিষয় থেকে নিজের পছন্দ ও দক্ষতা অনুযায়ী বিষয় বেছে নিয়ে ভোকেশনাল কোর্স করে সহজেই আপনার সন্তান যুগোপযোগী স্কিল অর্জন করে নিতে পারে। এতে দুটো কাজই হবে, “ডিগ্রী অর্জন এর সঙ্গে স্কিল!”
এবার আসি যে সমস্ত ছেলে মেয়েরা সদ্য মাধ্যমিক দিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ডুকছে বা যারা উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে, মহাবিদ্যালয় স্তরে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তাদের কথায় অথবা যারা দক্ষতামূলক ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষার দিকে না গিয়ে সাধারণ চাকরির জন্য নিজেদেরকে তৈরি করতে চাই তাদের কথায়।
যদি যেকোন বিষয় নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে যদি উত্তীর্ণ হওয়া যায় এবং সেই বিষয় সম্পর্কে নিজের কাছে যদি স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট জ্ঞান তৈরি হয় তাহলে তার ক্ষেত্রে শিক্ষকতা চাকরি, গবেষণা এবং আরো অন্যান্য চাকরির পাওয়াটা কঠিন হয়না। তবে ভূগোল নিয়ে পড়াশুনার কিছু সুবিধা উল্লেখ করি বিশেষত সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে।
ভূগোল নিয়ে কেন কেন পড়ব?
ভূগোল এমন একটা বিষয় যেটা অনেকের কাছে আর্টস আবার অনেকের কাছে সাইন্স। কেউ বলেন সমাজ বিজ্ঞান। ভূগোল অবশ্যই সমাজ বিজ্ঞানের একটি বিষয় কিন্তু এর যেমন প্রকৃত বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে তেমনি এর রয়েছে আর্টিস্টিক দিক।
তবে ভূগোলের সবথেকে গুরুত্ব আমার মনে হয় এর বিষয়বস্তু! এটি ভূপৃষ্ঠের উপরে মানুষ কে নিয়ে আলোচনা করে। তাই ভূপ্রকৃতি, নদ নদী, অবহাওয়া-জলবায়ু, মাটি, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও বাস্তু পরিবেশ, মানুষের সমাজ ও সংস্কৃতি, সম্পদ ও অর্থনৈতিক কাজকর্ম, জনসংখ্যা, জনবসতি, রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, ইত্যাদি বিচিত্র বিষয় ভূগোলে আলোচনা ও পড়াশুনা হয়। তাই ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করলে অনেক বিষয়ে একসঙ্গে জানা হয়ে যায়।
এখনো পর্যন্ত ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেখানে অর্ধেকের বেশি বিষয় ভূগোল সম্পর্কিত। তাই ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করলে সাধারণ জ্ঞানের উপরে ছেলেমেয়েরা অনেকটাই এগিয়ে থাকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে।
- যেমন, প্রাথমিক শিক্ষকতার চাকরীর ক্ষেত্রে যে Teacher Eligibility Test হয় সেখানে আবশ্যিক পরিবেশবিদ্যা বিষয়ের মধ্যে ভূগোল থাকে।
- উচ্চ প্রাথমিকে যে Teacher Eligibility Test হয় সেখানে ও সমাজবিদ্যা অংশে ভূগোল থাকে।
- রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর বিভিন্ন পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান (জেনারেল আওয়ার্নেস) অংশে প্রাকৃতিক ভূগোল থেকে, ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের ভুপ্রকৃতি, নদী, মাটি, জলবায়ু, স্বাভাবিক উদ্ভিদ সহ জনসংখ্যা, কৃষি, শিল্প, কলা ও সংস্কৃতি ইত্যাদি থেকে নানা প্রশ্ন থাকে।
- এছাড়া CGL, CHSL, MTS, Clerkship, Miscellaneous Exam ইত্যাদি পরীক্ষাতেও সাধারণ জ্ঞান (জেনারেল আওয়ার্নেস) অংশে ভূগোল থাকে অনেকটা।
ভূগোল যারা পড়তে চায়:
মাধ্যমিক পাশ করে যারা ভাবছো সরকারি চাকরির চেষ্টা করবে তারা এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে যারা ভূগোল নিয়ে কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক তাদের জন্য আজকের এই আলোচনা। মাধ্যমিক স্তরের ভালো অঙ্ক ও বিজ্ঞানের জ্ঞান ই যথেষ্ট ভূগোল বিষয়ে পড়াশুনা করে সাফল্য পেতে।
আমাদের এ-রাজ্যে তথা আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত সিংহভাগ ছেলে মেয়ে যারা ভূগোল নিয়ে কলেজে ভর্তি হয় তারা অধিকাংশই আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসে (আমি অভিভাবক অভিভাবিকাদের কে অনুরোধ করবো তাদের ছেলেমেয়েদেরকে ভবিষ্যতে ভূগোল নিয়ে পড়াতে চাইলে অবশ্যই বিজ্ঞান বিষয়গুলোর উপরে জোর দিতে করতে বলবেন)।
সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে খুব কম ছেলেমেয়ে ভূগোলে ভর্তি হয় যদিও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতার কয়েকটি কলেজে ভূগোল নিয়ে সাম্মানিক স্তরে পড়াশোনার ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিকে সায়েন্স থাকাটা বাধ্যতামূলক করা আছে সেক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা সাইন্স পড়ে তবেই ভূগোল নিয়ে ভর্তি হয়। তাদের ব্যাপারটা আলাদা।
কিন্তু তোমরা যারা অধিকাংশই আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসে ভূগোল নিয়ে পড়ছো তোমাদেরকে প্রথমেই আমি কয়েকটা কথা একটু বলে দিই:
1. আমি জানি তোমাদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাতে ভূগোল পড়তে পছন্দ করো এবং উচ্চমাধ্যমিকে তোমরা বাংলাতেই পড়াশোনা করেছ। কিন্তু তোমরা তো এতদিনে এটা বুঝে গেছো যে ভূগোল এমন একটা সাবজেক্ট যেখানে কিছু বৈজ্ঞানিক ভাবনাচিন্তা ও কিছু গাণিতিক ধারণা ব্যবহৃত হয়। তাই যদি ভূগোলকে খুব ভালো করে জানতে হয় এবং ভবিষ্যতে ভূগোল নিয়ে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখো তাহলে একটু মাধ্যমিক লেভেল এর অঙ্ক, জীবন বিজ্ঞান, ও ভৌত বিজ্ঞান এর বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকাটা একটু দরকার।
2. এখনো পর্যন্ত কিন্তু ভূগোলে ভালো বই বলতে আমরা ইংরেজি বই গুলোর কথাই পেয়ে থাকি। তাই প্রথমেই তোমাদের ইংরেজি ভীতিটা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং বাংলা বইয়ের পাশাপাশি সমান তালে বিখ্যাত ইংরেজি বই গুলো ফলো করতে হবে। যারা ইংরেজীতে দুর্বল তারা ইংরেজি ভূগোল বই গুলো তো পড়বেই তার পাশাপাশি যেটা করবে সেটা হলো সপ্তাহে অন্তত একটা করে ইংরেজি পেপার নিয়ে সেটা পড়ার চেষ্টা করবে। আজকাল আমাদের মোবাইলে ইংরেজি ডিকশনারি রয়েছে যেখান থেকে তুমি কোন একটি ইংরেজি শব্দের বাংলা অর্থ দেখে নিতে পারবে তৎক্ষণাৎ। তাই শুরু থেকেই এই অভ্যাসটা করে ফেলো।
3. দ্বিতীয় যে কথাটি বলবো সেটা হল ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়কপাঠ বলতে পারো মানচিত্র। তাই তোমরা প্রত্যেকেই একটা করে মানচিত্রের বই অবশ্যই সঙ্গে রাখবে যদি উচ্চমাধ্যমিক বা মাধ্যমিকে কিনে না থাকো।
4. ভূগোলে যেহেতু প্রচুর আঁকাআঁকির ব্যাপার থাকে তাই প্রথম থেকেই আঁকাআঁকি টাও একটু প্র্যাকটিস করতে হবে। তোমরা জানো বিশেষ করে প্রাকৃতিক ভূগোলের আলোচনা অঙ্কন ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মানচিত্র ও বিভিন্ন সময়ে আমাদের আঁকতে হয়। তাই না দেখে ভারতের মানচিত্র, পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র, পৃথিবীর মানচিত্র যেমন আঁকতে শিখতে হবে তেমনি বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ তথা মৃত্তিকা ভূগোল, জলবায়ু বিদ্যা ইত্যাদির বিভিন্ন ছবিগুলো সাবলীল ভাবে আঁকা শিখতে গেলে আঁকা প্র্যাকটিস করাটা খুব জরুরি। তোমরা যদি একটু মনে করে দেখো, নিচের ক্লাস এ কিন্তু তোমাদের ম্যাপ পইন্টিং ছিল, বিভিন্ন ভূমিরূপ এর ছবি আঁকা ছিল।
5. ভূগোলে প্রচুর পরিভাষা ব্যবহৃত হয় এগুলোর সঠিক ইংরেজি ও বাংলা নাম এবং তাদের অর্থ যদি না জানো তাহলে পদে পদে তোমাকে সমস্যায় পড়তে হবে। সেজন্য ভূগোল পরিভাষার ন্যূনতম একটা বই সঙ্গে রাখবে।
6. তোমরা জানো যে ডিকশনারি আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বিভিন্ন ছোট ছোট ধারণা সহজে খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে। ভূগোলের জন্য তোমাদেরকে শুরুতেই এরকম একটি ডিকশনারি কিনে নিতে হবে। বাজারে অনেক ডিকশনারি আছে অধিকাংশই ইংরেজিতে। তোমরা একটি ডিকশনারি কিনতে পারো বা প্রাকৃতিক ভূগোল এবং মানবীয় ভূগোলের জন্য আলাদা আলাদা ডিকশনারি কিনতে পারো। আমি এখানে বিষয়ভিত্তিক ভূগোলের বিভিন্ন বই বাংলা এবং ইংরেজী মাধ্যমে পরিভাষার বই, ডিকশনারি, মানচিত্রের বই এগুলো সব এরই তালিকা দিয়ে রেখেছি তোমরা দেখে নিও। অনলাইনে আমাজন থেকে, ফ্লিপকার্ট থেকে বা যেকোনও বই এর দোকান থেকে কিনতে পারো।
7. আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া এবং উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যেখানে তোমাদের কাছে ইন্টারনেট খুব সহজলভ্য হয়েছে এবং গত দেড় বছরের লকডাউন তোমাদের কে আরো কয়েকটা বিষয় শিখিয়ে দিয়েছে যেগুলো তোমরা ভবিষ্যতে তোমাদের চলার পথে অবশ্যই সঙ্গে রাখবে। আর সেটা হলো ইন্টারনেট এর ব্যবহার করে গুগোল ও ইউটিউব থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়ভিত্তিক স্টাডি মেটেরিয়াল এবং বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক ভিডিও আলোচনা খুঁজে খুঁজে পড়া।
10 বছর আগেও ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু এটা ভাবতেও পারত না। ইন্টারনেট এখন একটা বিরাট গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী বলতে পারো যেখানে বই থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম নোটস এবং বিভিন্ন ইন্টারেস্টিং ভিডিও পেয়ে যাবে যা তোমাদেরকে ভূগোলের যেকোনো বিষয়কে খুব সহজেই বুঝতে সাহায্য করবে।
তোমাদের পড়াশুনাতে সুবিধার জন্য Knowledge & Education for You (KEY) YouTube চ্যানেল, Facebook পেজ ও ব্লগ এনেছ যেখান বিভিন্ন বিষয়ে তোমরা study material ও ভিডিও পেয়ে যাবে।
এছাড়া এই প্রবন্ধের লেখক মালদার গৌড় মহাবিদ্যালয় এর ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক সাইফুজ্জামান তরফদার তার website এ ও অনেক তথ্য রেখেছেন যা তোমাদের online পড়াশুনাতে অনেক সাহায্য করবে। এখানে অনেক লিংক পাবে যেখান থেকে ভূগোল সহ বিভিন্ন বিষয়ের বই ও নোট ডাউনলোড করতে পারবে।
লিংক সমুহ:
Follow my website: https://sites.google.com/view/syfujjaman/home
Follow my Facebook page: https://www.facebook.com/Syfujjaman 2013/
Blogger Website: https://keylearningcorner.blogspot.com/
ভূগোল নিয়ে পড়াশুনা চলাকালীন বা পাস করার পর কি করবে?
আজ থেকে 10 বছর বা 15 বছর আগে ভূগোল বিষয়টা কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরের যতটা লোভনীয় ছিল এখন কিন্তু অতটা নেই। এর কারণ অবশ্যই শিক্ষকতার চাকরির বাজারে মন্দা এবং ভূগোল বিষয়টাতে যথেষ্ট সংখ্যায় শিক্ষক শূন্যপদ না থাকা। তবে সাধারণ ছাত্রছাত্রী কাছে ভূগোল বিষয়টির গুরুত্ব কমলেও ভূগোল বিষয়কে যারা বিশেষভাবে পছন্দ করে এবং ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করে তাদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে এবং তাদের ভূগোল নিয়ে ভবিষ্যতে কেরিয়ার তৈরীর নানা দিক রয়েছে।
যেমন,
১. স্কুল শিক্ষকতা: ভূগোল নিয়ে পাশ করার পরে শিক্ষকতার জন্য নির্দিষ্ট ট্রেনিং ডিগ্রী (বি. এড) অর্জন করার পর দেশের এবং রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয় এ শিক্ষকতা করার সুযোগ মেলে। এক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা রয়েছে যেগুলো পাস করতে হয়।
কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সহ ভারতীয় রেল, ভারতীয় আর্মি, এবং বিভিন্ন পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং পরিচালিত বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষকতার চাকরি পেতে গেলে সেন্ত্রাল টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট (CTET) পাস করতে হয়। CBSE এই পরীক্ষাটি প্রতি বছর দুই দুবার করে নেয়। প্রাথমিক স্তরের জন্য (I-V) এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরের জন্য (VI-VIII) আলাদা আলাদা পরীক্ষা নেওয়া হয়। CTET পাশ করার পরে বিষয়গত ও ভাষাগত দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা দিতে হয় এবং তারপর সুনির্দিষ্ট শিক্ষকতা ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষকতার নিয়োগ দিয়েছে ঐ সমস্ত বিদ্যালয় এ।
এছাড়া IX-XII স্তরে শিক্ষকতার জন্য নির্দিষ্ট পরীক্ষা দিতে হয়।
বিভিন্ন রাজ্যেও সুনির্দিষ্ট TET পরীক্ষা ও শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা রয়েছে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক এর জন্য।
পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিকের জন্য প্রাইমারি টেট, উচ্চ প্রাথমিকের জন্য Upper প্রাইমারি টেট, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য শিক্ষক হতে গেলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাম্মানিক ডিগ্রি ও মাস্টার ডিগ্রী থাকতে হয়।
সম্প্রতি পরীক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে যেখানে পিএসসি ধাঁচে প্রিলিমিনারী ও মেন পরিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এখনে থাকছে TET, বিষয় দক্ষতা যাচায় ও ভাষাগত দক্ষতা যাচায় পরীক্ষা (লিঙ্ক)।
২. কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এ শিক্ষকতা: পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সহকারি অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করা আবশ্যক (সাধারণ প্রার্থীদের ৫৫% বা তার বেশি নম্বর থাকা আবশ্যক)। তারপর SET বা NET পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রাথমিক সুযোগ মেলে। তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (UGC) একটি নোটিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রী বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছে।
যোগ্যতা অর্জনের পর পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কলেজ সার্ভিস কমিশন এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন বিভিন্ন সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত ও সরকারি কলেজ গুলির জন্য সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ এর ইন্টারভিউ নেয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের প্রয়োজন মত ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করে বিভিন্ন সময়ে।
৩. গবেষক হিসেবে যোগদান: পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা ভারতে একাধিক ভূবিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে যেখানে ভূগোলে মাস্টার ডিগ্রী করা (এবং NET-JRF পাশ) সম্ভাবনাময় ছেলেমেয়েরা গবেষক হিসেবে যোগদান করতে পারে সুনির্দিষ্ট ফেলোশিপ নিয়ে। যেমন, ইউজিসির জুনিয়ার রিসার্চ ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ, সংখ্যালঘুর ছেলে মেয়েদের জন্য মৌলানা আজাদ নেশনাল ফেলোশিপ, তপশিলি জাতি ভুক্ত দের জন্য রাজিভ গন্ধি নেশনাল ফেলোশিপ ইত্যাদি অনেক ফেলোশিপ হয়েছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর সোশল সাইন্স রিসার্চ (ICSSR), ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল এন্ড ইকোনমিক চেঞ্জ (ISEC), ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটস অফ সায়েন্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চ (IISER), ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কলকাতা (IDS), ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (ISI), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফি (NIO), ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন সাইন্স (IIPS), টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশল সাইন্স রিসার্চ (TISSR) ইত্যাদি অনেক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে যেখান থেকে উপরিউল্লিখিত ফেলোশিপ বা এই সমস্ত ইনস্টিটিউট এর নিজস্ব ফেলোশিপ নিয়ে ভূগোল এর ছেলেমেয়েরা গবেষণা করতে পারে ও উচ্চতর ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এছাড়া পিএইচডি করার জন্য ভূগোলের ছেলেমেয়েরা ভারতবর্ষে বিভিন্ন আইআইটি গুলিতে সুযোগ নিতে পারে, উন্নততর গবেষণা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভাল গুণমান সম্পন্ন গবেষণা দেখাতে পারলে আইআইটিতে শিক্ষকতা সহ বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ তৈরি হয়।
৪. বিভিন্ন প্রফেশনাল বডিতে চাকরি: দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন প্রফেশনাল বডি থাকে সরকারি বা বেসরকারি পরিচালনায়। যেমন, ভারতবর্ষে সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (SOI), ন্যাশনাল এটলাস এন্ড থিমেটিক ম্যাপিং অরগানাইজেশন NATMO), ইত্যাদি সরকারি সংস্থা সহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা রয়েছে যারা মানচিত্র প্রস্তুত করন ও ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (GIS) নিয়ে কাজ করে এবং কিছু সংস্থা এরকম আছে যারা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। ভূগোল নিয়ে স্নাতক বা মাস্টার ডিগ্রি করার পর সুনির্দিষ্ট পেশাদারী কোর্স করে চাকরি পাওয়া যেতে পারে।
Remote Sensing and GIS এর উপরে ভূগোলের ছেলেমেয়েরা ডিপ্লোমা ও মাস্টার ডিগ্রী করতে পারে এবং জিআইএস, Cartography ও Digital mapping নিয়ে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সেখানে পেশাদার হিসেবে নিযুক্ত হতে পারে।
পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন এর উপরে বিশেষ ডিপ্লোমা বা ডিগ্রী করে পরিকল্পনাকারী হিসেবে নগর পরিকল্পনা, গ্রামীণ পরিকল্পনা, পরিবহন পরিকল্পনা ইত্যাদিতে কাজ পাওয়া যেতে পারে। যেমন, গ্রামীণ উন্নয়নের উপরে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করার পর গ্রামীণ উন্নয়ন উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে এরকম অনেক সংস্থাতে কাজ পাওয়া যেতে পারে।
বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ওপরে ও ভূগোলের ছেলেমেয়েরা দিপ্লোমা ডিগ্রী করতে পার। এক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সংস্থা তে চাকরি পেতে পারে। IGNOU থেকে করা যায়।
পর্যটন নিয়ে যদি কারো আগ্রহ থাকে তাহলে সে পর্যটন ভূগোলের উপরে আরো বেশি পড়াশোনার জন্য 'পর্যটন ব্যবস্থা' নিয়ে দিপ্লোমা ডিগ্রী কোর্স করতে পারে। IGNOU থেকে করা যায়। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা ও এজেন্সি তে চাকরী পাওয়া যেতে পারে।
৫. সরকারি আধিকারিক ও সরকারি চাকরি: পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতবর্ষে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি আধিকারিক ও কর্মী নিয়োগের বিভিন্ন পরীক্ষাতে ভারতবর্ষের ভূগোল এর উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। তাছাড়া সাধারণ জ্ঞান এর একটা বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে ভূগোল। তাই ভূগোল নিয়ে যারা পড়াশোনা করে এই সমস্ত পরীক্ষার জন্য তারা এক ধাপ এগিয়ে থাকে এ কথা বলাই যায়। WBCS, UPSC, বিভিন্ন রাজ্যের PSC পরীক্ষার মাধ্যমে যেসব আধিকারিক নিয়োগ করা হয় সেখানে ভূগোল বিষয়টিকে পছন্দ বিষয় হিসেবে নিলে অনেক সুবিধা হয়।
অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে ভূগোল বিষয়ের উপরে জ্ঞান অনেক সাহায্য করে।
No comments:
Post a Comment