বিগত শতাব্দীর এবং বর্তমান শতাব্দীর প্রথিতযশা ভৌগোলিক দের একজন হলেন Peter Haggett. আধুনিক ভৌগলিক গবেষণা পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুর উন্নয়নে যে কজন ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে হ্যাঁগেট পূর্বভাগে থাকবেন। বর্তমান ভূগোলের অন্যতম জীবন্ত কিংবদন্তি হলেন তিনি। 1933 সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের ঠিক 30 বছরের মাথায় ভূগোলের পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটে। প্রত্যক্ষবাদ ও দৈশিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভূগোলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয় যাকে ভূগোলের প্যারাডাইম শিফট বলে এবং মাত্রিক বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে। 1960 এর দশক থেকে তিনি ভূগোলের নতুন প্যারাডাইম spatial organization' কে দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যান। আধুনিক ভূগোলের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগত উন্নয়নে তাই তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
Contribution of Peter haggett in geography:
মানবীয় ভূগোলের একজন গবেষক হিসেবে পিটার হ্যাঁগেট দৈশিক বিশ্লেষণ এর ক্ষেত্রে নানা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অবতারণা করেন। Richard Chorley সহ আরো কয়েকজন মানবীয় ভৌগলিক কে নিয়ে তিনি মানবীয় ভূগোলের নানা বিষয়ের গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে প্রায় দীর্ঘ 60 বছর নিয়োজিত আছেন এবং 1996 সাল থেকে ইউনিভার্সিটি অফ বৃষ্টল এ নগর ও আঞ্চলিক ভূগোলের প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত আছেন। উত্তর আমেরিকা সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে বিভিন্ন সময়ে নিযুক্ত ছিলেন। আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের রয়েল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি তরফ থেকে তিনি সোনার মেডেল পেয়েছেন। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে নানা ধরনের উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে ভূগোলে তার অসামান্য অবদানের জন্য।
ভূগোলে তার গবেষণা ও লেখালেখি কে তিনটি প্রধান বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে ভাগ করা যেতে পারে।
প্রথমটি হলো on the nature of geography as a discipline and its contribution to human understanding of the earth. এই ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ লেখনি গুলি হল:
Models in geography (1967)- দুটি ভলিউমের এই বইয়ে তিনি মানবীয় ভূগোল এ ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতিগত দিকের আলোচনা করেছেন ও মানবীয় ভূগোলের নতুন নতুন পদ্ধতি র অবতারণা করেছেন। বিশেষত অর্থনৈতিক ভূগোলের মডেল এর ব্যবহার সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেছেন। Chorley কে সঙ্গে নিয়ে তিনি মানবীয় ভূগোলের নিয়ম স্থাপনকারী (nomothetic) পদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে ভৌগোলিক গবেষণার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তারা বলেন model হল প্রকৃতপক্ষে বাস্তব বিষয়ের প্রতিরূপ বিজ্ঞানীরা তৈরি করে থাকেন বাস্তব বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য।
Geography: a modern synthesis (1971)- চারটি সংস্কারে এই বইতে ও তিনি আধুনিক মানবীয় ভূগোলের গবেষণা পদ্ধতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। গাণিতিক মডেল এর ব্যবহার তার গবেষণায় দেখা গেছে।
The geographers art (1990) এবং geography: a global synthesis (2001)- এই দুটি বইয়ে তিনি ভৌগোলিক দের আর্টিস্টিক ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বিশ্বব্যাপী গবেষণা ও আলোচনা নিয়ে তিনি বলেছেন দ্বিতীয় বইটিতে।
দ্বিতীয় টি হল quantitative methods in human geography and Central role of locational analysis in research. এই ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ লেখনি গুলি হল:
Locational analysis in human Geography (1965)- এই বইয়ে তিনি ভূগোলে অবস্থানগত মডেলের প্রয়োগের ওপর আলোচনা করেছেন এবং মানবীয় ভূগোলের বিভিন্ন শাখায় যে সমস্ত মডেল ব্যবহার করা যায় সে গুলির উপর আলোকপাত করেছেন। ভৌগলিক ঘটনার অবস্থান নির্ণায়ক তত্ত্ব ও মডেল নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
Network analysis in geography (1969)- এই বইয়ে তিনি ভূগোলের আলোচনা পদ্ধতিতে একটি নতুন বৈজ্ঞানিকের সূত্রপাত ঘটান। জ্যামিতিক নীতি ভূগোলে প্রয়োগ করেন। যেসব সরলরৈখিক ভৌগোলিক বিষয়গুলি ভূপৃষ্ঠের উপর গড়ে ওঠে, যেমন নদীর বিন্যাস, পরিবহন ব্যবস্থার বিন্যাস ইত্যাদি, তাদের বিন্যাস বন্টন উন্নয়ন ইত্যাদির বিশ্লেষণে তিনি গণিতের নেটওয়ার্ক অ্যানালিসিস পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটান। ভূগোলের গবেষণায় বিশেষ করে পরিবহন ভূগোলের গবেষণায় নতুন দিকের উন্মোচন ঘটে। Graph theory, connectivity matrix, ইত্যাদির প্রয়োগ ঘটান ভূগোলে।
Elements of spatial structure (1975)- এই বইয়ে তিনি ভৌগলিক দেশের উপাদানসমূহ কিভাবে বাস্তব পৃথিবীতে বিভিন্ন বিষয় যেমন, জনসংখ্যার বন্টন, নগরও আঞ্চলিক উন্নয়ন, দৈসিক ব্যাপন ইত্যাদির ব্যাখ্যায় অঙ্গাঙ্গী হয়ে ওঠে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
Locational models (1977) ও Locational methods (1977) এই দুটি বইয়ে ও তিনি মানবীয় ভূগোলের বিভিন্ন বিষয়ের অবস্থানগত পদ্ধতি, তত্ত্ব এবং তাদের প্রয়োগের বিভিন্ন দিকের উপর আলোকপাত করেছেন।
তৃতীয় টি হল applying geographical ideas, especially diffusion waves, to understanding the changing geography of infectious diseases. Medical geography তে তার অবদান অনস্বীকার্য। দৌসিক ব্যাপন পদ্ধতির দ্বারা তিনি বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ছড়িয়ে পরার ওপর গবেষণা করেন এবং একাধিক গাণিতিক পদ্ধতির সূত্রপাত ঘটান। সংখ্যান বিদ্যার ব্যবহারের দ্বারা রোগের প্রাদুর্ভাব ও ছড়িয়ে পড়া বিষয়ে তাঁর গবেষণা কিংবদন্তি। Trend surface analysis, time series analysis, spatial autocorrelation, spatial forecasting ইত্যাদি দৈশিক্ পরিসংখ্যানবিদ্যার ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে তিনি একটি মনোগ্রাফ রচনা করেন 'geography of disease'. Special aspects of influenza epidemics (1986), Atlas of disease distribution (1988), Atlas of AIDS (1992), disappearing global epidemics, Island epidemics (2000), world atlas of epidemic diseases (2004) ইত্যাদি নানা লেখালেখি ও গবেষণা তিনি এক্ষেত্রে করেন এবং বর্তমানে করে চলেছেন।
Conclusion:
বর্তমানে জীবিত কিংবদন্তি ভৌগোলিক দের অন্যতম তিনি। ভূগোলের বিশেষত মানবীয় ভূগোলের পদ্ধতিগত দিক এর উন্মোচনে তার অবদান সারা পৃথিবী জুড়ে প্রশংসিত ও আলোচিত হয়ে আসছে। জীবদ্দশায় তিনি ভূগোলের আলোচনায় যে অবদান রেখেছেন এবং তার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি যে সমস্ত স্বীকৃতিও প্রশংসা পেয়েছেন বিশ্বজুড়ে তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তী!
No comments:
Post a Comment