জনসংখ্যার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল বয়স্ক জনসংখ্যা যাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা মনোযোগ দাবি করে। এই জনসংখ্যা প্রতিটি দেশের মোট জনসংখ্যার একটা বড়ো অংশ এবং বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অনুপাতে বিদ্যমান এবং এটা নানা বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। যেমন জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে তেমনি আছে আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট। সাধারণত উন্নত দেশে বয়স্ক জনসংখ্যার অনুপাত বেশি (জাপানে ৪৪%, আমেরিকাতে ৩৭.৯%) কম উন্নত দেশের তুলনায় (ভারতে ৮.৬%)। এটার ব্যাখ্যাটা ঠিক এরকম: কম উন্নত দেশে বেশি শিশু জন্মায় তাই তাদের ক্ষেত্রে শিশু ও যুবক জনসংখ্যা বেশি, আবার উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবে প্রবীণ বয়সের মৃত্যু বেশি এবং প্রত্যাশিত জীবনকাল ও কম তাই বয়স্ক জনসংখ্যা কম হয়। উন্নত দেশে ঠিক বিপরীত কারনে বয়স্ক জনসংখ্যা বেশি হয়। সুতরাং দেখাযাচ্ছে বেশি বয়স্ক জনসংখ্যা বেশি উন্নত অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার সমর্থক। যদিও বয়স্ক মানুষদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা আবার একেবারে উল্টো চিত্র প্রদান করে। ভারতের মতো দেশে যেখানে মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বয়স্ক জনসংখ্যা জাপান চিন বা ইউ এসএ এ র মত বেশি না হলেও বেশ খানিকটা (৮.৬%), এবং অধিক জনবহুলতার কারনে সংখ্যাটা যেহেতু অনেক (১০ কোটি), এবং সব থেকে বড়কথা এদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এতই খারাপ যে তা পৃথক ভাবে আলোচনার দাবি রাখে।
পরিবারের ও দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘ অংশগ্রহন করার পরে এরা অবসরে প্রবেশ করে। বয়সের ভারে শারীরিক কারনে এঁরা সমাজ অর্থনীতির উপরে বোঝা স্বরূপ হয়ে পড়ে এবং পরিবারের উপারজনহীন সদস্যে পরিনত হয়ে। এদের অবস্থা, তখন হয় "না ঘরকা না ঘাটকা" রকমের। বয়স্ জনিত নানান অসুস্থ্যতা এদের আক্রমন করে এবং পরিবারের বর্তমান উপার্জনক্ষম সদস্যরা বিরক্তির চোখে দেখে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারে অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকে। প্রবীণ বয়সের সঠিক চিকিৎসা থেকে এঁরা বঞ্চিত হন। এই বঞ্চনার কারণ নানা রকম হতে পারে- পরবর্তী প্রজন্মের আর্থিক অস্বচ্ছলতা, পরবর্তী প্রজন্মের অস্বাভাবিক ইঁদু-দৌড় ব্যস্ততা, বা কিছু ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মের এদের প্রতি ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত অবহেলা। যদিও একটা দীর্ঘ সময় এঁরা নিজেদের উপার্জন দিয়ে, শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিয়ে বড়ো করে তুলেছেন বর্তমান প্রজন্ম কে। আজকের শিশু পরবর্তী সময়ের ভবিষ্যৎ, এটা আমরা জানি তাই শিশুকে তার উপযুক্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করে বড় করে তুলি। কিন্তু যারা এই মহান কাজটি এতদিন ধরে করল এবং কর্মক্ষমতা হারিয়ে বয়স্ক হয়ে পড়ল তাঁদের দিকে পরিবার ও সমাজ নজর দিতে ভুলে যায়- ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কারণে। অথচ তাঁদের অধিকার রয়েছে উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার যাতে তারা তাদের অবসর জীবনে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
উন্নত দেশে এই প্রবীণ নাগরিক সমস্যা তেমন প্রকট নয় কারন সেখানে প্রবীণ নাগরিকেরা অধিকাংশই শিক্ষিত, চাকুরে বা সফল ব্যবসায়ী থেকে অবসর নিয়ে নিজেরাই নিজেদের অবসর পরবর্তী জীবনের ভার নিয়ে রাখে, বৃদ্ধাশ্রমে বা অন্যান্য নানা ভাবে জীবন যাপন করে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা স্বাধীনভাবে নিজেদের অবসর জীবন যাপনে সক্ষম হয়। তাছাড়া সেখানে সরকারী স্বাস্থ্য পরিষেবা তারা পেয়ে থাকে যথাযথ ভাবে ও সময়ে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু আলাদা। যেহেতু এদেশে প্রায় ৮০% মানুষ নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত তাই প্রবীণ মানুষদের সংখ্যাটা অনেক বেশি যারা এই বয়সে এসে নিজেদের জন্য কিছু না রাখার ফলে নিজেদের দেখতে পারেনা, আবার পরিবারের সদস্যরা ও বিশেষ নজর দেয় না। এইসব প্রবীণ মানুষেরা অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের অংশ হাওয়ায় উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থাকে। হয় পরিবারের বর্তমান স্বল্প উপার্জনক্ষম সদস্যদের এদের উপযুক্ত স্বাস্থ্যপরিসেবা দেওয়ার ক্ষমতা থাকেনা বা সীমিত সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা এদের কাছে পৌঁছায় না। এখানেই প্রকাশিত হয় আমাদের মত দেশের মানুষের সল্প ধৈর্যের চিত্ত, বুঝি দান- প্রতিদানের নিয়ম এদের ক্ষেত্রে কার্যকরী নয় (অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ বার্ধক্য জনিত অসুস্থতা ও অনেক ক্ষেত্রে মানষিক বৈকল্য পরিবারের বর্তমান সদস্যেদের বিরক্ত করে তোলে)। ফলস্বরূপ তৈরী হয় এক দীর্ঘ অবহেলার ইতিহাস! পরিবারে ব্রাত্য এই মানুষ গুলো একান্তে, একাকী, সুস্বাস্থ্যহীন দিনাতিপাত করেন। কোথাও তো ঘরও জোটেনা, রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়, ভিখারীর জীবন যাপন করতে বাধ্য হন। পরিবারে একসময়ের সু-উপার্জনে সক্ষম ব্যক্তিটি আজ উপার্জনহীন নিরীহ প্রাণীতে পরিণত হয়।
আজকের আলোচনার বিষয় তাই এই বয়স্ক্ প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে অবশ্যই ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে, যদিও তুলনা টানা উচিত হবে পৃথিবীর অন্যান্য কিছু উন্নত দেশের বয়স্ক মানুষের অবস্থার সঙ্গে।
প্রবীণ নাগরিক- উন্নত বিশ্ব;
জাপান, আমেরিকা ইত্যাদির মত উন্নত দেশে মোট জনসংখ্যার নিরিখে বয়স্ক জনসংখ্যা শতাংশের বিচারে বেশি সেটা আগেই দেখা গেছে কিন্তু ওই সব দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যাটা তুলনামূলক ভাবে কম যেহেতু মোট জনসংখ্যা কম। তাছাড়া তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বেশ ভালো। যেমন জাপানে মোট বয়স্ক মানুষের মধ্যে মাত্র ৯% পুরুষ ও ১৫% মহিলা গরীব এবং আমেরিকাতে মাত্র ৩.৬ মিলিয়ন বয়স্ক গরীব। (যদিও এই সংখ্যাটা মোটেও ভারতের দারিদ্রতার সঙ্গে তুলনীয় নয়)। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে জাপানের মতো উন্নত দেশে মোট জনসংখ্যার তুলনায় বয়স্ক জনসংখ্যা র অনুপাত বেশি হলেও তাদের অধিকাংই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ফলে অবসর-পরবর্তী চিকিৎসা পরিষেবা তারা নিজেরাই সংস্থান করার ক্ষমতা রাখে, পরবর্তী প্রজন্মের উপরে নির্ভর করতে হয়না। তাছাড়া এখানে সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো যথেষ্ট উন্নত এবং নাগালের মধ্যে। ফলে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা সহজেই এখানকার প্রবীণ মানুষেরা পেয়ে থাকেন।
তাছাড়া জাপানে প্রবীণ মানুষেরা যথেষ্ট কর্মক্ষম থাকে্ন ও নিজেদেরকে নানারকম অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজকর্মে যুক্ত থাকেন ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও ভালো থাকে। একটা কথা বলে রাখা ভালো যে শারীরিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে বাসস্থানের পরিবেশের উপর। উন্নত দেশে বাসস্থানের পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য-বিধি সম্মত, তাই শারীরিক অসুস্থতা ও তাদের মধ্যে কম দেখা যায়। তাছাড়া জীবনযাত্রার ধরন, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।
আমেরিকা সহ উন্নত বিশ্বে বয়স্ক মানুষেরা নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগে কিন্তু সেগুলো অনুন্নত দেশের থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। এদের প্রধান রোগ গুলো হল হাইপারটেনশন, হার্টের অসুখ, মধুমেহ, স্নায়ুবিক অসুখ ইত্যাদি। ক্যান্সার ও একটি গুরুত্তপূর্ণ রোগ যা বয়স্ক মানুষের মধ্যে বেশি। তবে সরকারী স্বাস্থ্য পরিষেবা এখানে বেশি। যেমন আমারিকাতে অবসর নেওয়ার ১২ মাসের মধ্যে সরকারি ভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দিয়ে দেওয়া হয় ও অর্ধেকের বেশি জনকে নিউমোনিয়া টিকা দেওয়া হয়। আমেরিকাতে প্রায় ২৫% প্রবীণ মানুষ অবসরকালীন সময়ে নানা কাজকর্মে যুক্ত থাকে। বাকিদের মধ্যে ২৫% ওবেসিটি তে আক্রান্ত। আমেরিকার প্রবীনদের মধ্যে ধূমপানের অভ্যাস বেশি ফলে ধূমপান জনিত অসুখ যেমন ক্যান্সার, ফুসফুসের ফ্লু বেশি দেখা যায়। 8 শতাংশের মতো প্রবীণ মানুষেরা অস্বাভাবিক মদ্যপান করেন। এজন্য আমেরিকাতে হৃদপিণ্ড ব্যর্থতায় মৃত্যুর হার সর্বাধিক যা ৮ ২ % এর কাছাকাছি। এদের মধ্যে ১১% এর মতো ব্যক্তিগত খরচে বা স্বাস্থ্য স্কিমের আওতায় স্বাস্থ্য সুবিধা পেয়ে থাকে। প্রায় সকলেই ফর্মাল বা ইনফর্মাল চিকিৎসা সুযোগ পেয়ে থাকে যা পরিবারের আত্মিয়ের দারা বা চাকরি সংস্থা দ্বারা এদের অধিকাংশ বিভিন্ন পেনশন স্কিম বা স্বাস্থ্য সুবিধা যুক্ত স্কিম এর আওতায় পড়ে ফলে অর্থনৈতিক কষ্ট বা জনস্বাস্থ্য পেতে অসুবিধা হয়না।
প্রবীণ নাগরিক- ভারত সহ তৃতীয় বিশ্ব:
ভারত ১২১ কোটি জনসংখ্যার দেশ (২০১১ জনগণনা বছর) যেখানে নির্ভরশীল জনসংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি যার মধ্যে বয়স্ক প্রায় ১০ কোটি। এরা মোট জনসংখ্যার ৪.৬%%। এদের মধ্যে পুরুষ ৮.৩% (মোট পুরুষ জনসংখ্যার) এবং মহিলা ৯% (মোট মহিলা জনসংখ্যার)।
ভারতে এই বয়স্ক মানুষের চাহিদার বিষয়টি বুঝতে হবে তাদের আর্থসামাজিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও লিঙ্গ ভেদে। অর্থাৎ পারিবারিক অবস্থা, পেশা, বসবাসের স্থান ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে। তবে দরিদ্র সম্প্রদায়ের বয়স্ক মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ এবং অধিক মনোযোগ আকর্ষণের দাবি করে।
যেমন Agewell এর তথ্য অনুযায়ী ভারতে নির্ভরশীল পুরুষ বয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১০% তাদের স্ত্রীদের উপর নির্ভরশীল প্রায় ৮ ৫% তাদের সন্তানের উপর ২০%, ৭০ % এবং ৩ %।
ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে বয়স্ক নাগরিকের মধ্যে নিরক্ষরতা অধিক এবং তারা বেশি দুর্দশার শিকার। এক্ষেত্রে মহিলা বয়স্ক নাগরিকের অবস্থা পুরুষ বয়স্ক নাগরিকের তুলনায় বেশি খারাপ। দরিদ্র পরিবারগুলি তাদের অন্নবস্ত্র ও চিকিৎসার খরচ না দিতে পারায় অনেক ক্ষেত্রে তাদের ভিক্ষাবৃত্তি অর্জন করতে দেখা যায়।
Agewell এর সমীক্ষাতে প্রকাশ, ভারতে প্রায় ৬ ৫% বয়স্ক মানুষ তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে তথা চিকিৎসার প্রয়োজনে পরিবারের উপর্জনশিল সদস্যের উপরে নির্ভর করে। এর মধ্যে মহিলারা অধিক নির্ভরশীল। মাত্র ২০% এর কম বয়স্ক মহিলারা নিজ উপার্জনে জীবন ধারন করেন, যদিও পুরুষের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা প্রায় অর্ধেক।
বাকী যে এক তৃতী়াংশ বয়স্ক মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো তারাও বর্তমান দ্রুতগতির জীবন ও অনু পরিবারের প্রাধান্যের কারনে তাদের জীবনে অনুপ্রবেশ করেছে নানা মানুষিক যন্ত্রণা। অনেকেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বা একাকী প্রায় গৃহ বন্দী দশা যাপন করছেন। এখানে মনে পড়ছে স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী মান্না দে র কথা। শেষ জীবনে তিনিও একাকী গৃহবন্দী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে ভারতে বয়স্ক নাগরিকের অর্ধেক কোন কর্মে যুক্ত থাকে না এবং মাত্র এক-পঞ্চমাংশ কৃষিশ্রমিক রূপে কাজ করে। তবে অতি বয়স্করা সেটাও পারেনা। বিভিন্ন গবেষণা থেকে আরো দেখা গেছে যে গ্রামে এদের সংখ্যা বেশি এবং গ্রামীণ বয়স্ক নাগরিকের অবস্থা বেশি খারাপ কারণ তারা অধিকাংশই নিরক্ষর এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করার ফলে বেশি করে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে। আবার গ্রামে স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল খুব খারাপ, ফলে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার নেয়। যদিও আত্মীয়তার সম্পর্ক গ্রামে বেশি থাকার কারণে গ্রামীণ বয়স্ক মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে শহরের বয়স্ক মানুষের তুলনায় ভালো থাকে এটা বলা যায় কিন্তু গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত বা নিরক্ষর মানুষদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা নেই।
কর্মসংস্থানের অভাব ভারতীয় অর্থনীতির একটি প্রধান সমস্যা। এখানে দক্ষ ও অদক্ষ কোন কর্মচারী উপযুক্ত পেশা ও বেতন পায় না। রাজ্য ভেদে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সামগ্রিক চিত্রটি প্রায় একই রকম। ফলে দক্ষ ও অদক্ষ সব ধরনের মানুষেরা বসবাসের স্থান ছেড়ে অন্যত্র কাজের উদ্দেশ্যে গমন করে এবং সেটা অন্য রাজ্য বা অন্য দেশ হতে পারে। এর ফলে শ্রমের চালানো হচ্ছে যেটা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো না। দক্ষ শ্রমিকেরা দেশ ছেড়ে চলে গেলে দেশের দক্ষ শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়। আবার গ্রাম থেকে অদক্ষ শ্রমিকের বিদেশে বা ভিন রাজ্যে কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলে কৃষিক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব পড়ে কারণ সেখানে শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়। যদিও গ্রামে কৃষি ক্ষেত্রে যথেষ্ট মজুরির স্বল্পতা থাকায় এবং অন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় গ্রাম থেকে অদক্ষ শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে বা শহরে পাড়ি জমাতে দেখা যায় মোটা মজুরির আশায়। এইসব গ্রামের দরিদ্র পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যরা শহরে বা ভিন রাজ্যে কাজের উদ্দেশ্যে গমন করলে পরিবারের বয়স্করা আরো অসহায় হয়ে পড়ে ও চরম অবহেলার শিকার হয়। তাদের দেখার কেউ থাকেনা, অসুস্থ হলে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার মত কেউ থাকেনা। এটা অনেক ক্ষেত্রে সত্য যে বর্তমান উপার্জনক্ষম সদস্যরা বয়স্কদের চিকিৎসা পরিষেবার খরচ বহনে অক্ষম হয় ফলে বয়স্করা, বিশেষত দরিদ্র পরিবারের, চিকিৎসাহীন দিনাতিপাত করে।
অনুন্নত বিশ্বে বিপুল জনসংখ্যা শহর ও গ্রামে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হয়। বাসস্থানের পরিবেশ কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সেটা সম্পর্কে এখানকার মানুষের সচেতনতা থাকেনা বা থাকলেও উন্নত পরিবেশে বসবাস করার সক্ষমতা না থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের শারীরিক অসুস্থতা বেশি হয়। তাছাড়া অনাহার ও অপুষ্টি জনিত কারণে ও অসুস্থতা বেশি হয়।
ধণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে চলা দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তে থাকে, প্রতিবছর বের হওয়া ক্ষুধা রিপোর্ট সেটা প্রমাণ করে। বিশ্বব্যাপী উন্নত ও অনুন্নত সব দেশেই এই বৈষম্য ক্রমবর্ধমান। ফলে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে দারিদ্রতার দিকে প্রতিমুহূর্তে ফেলে দিচ্ছে যা মানব সভ্যতার কাছে অশনিসংকেত বহন করে নিয়ে আসছে। কারণ বিপুল দরিদ্র জনসংখ্যা মানেই হলো অনাহার, অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন, অবিশুদ্ধ খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ যা জনস্বাস্থ্যকে দুর্বল করে দেয় এবং সেটা দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করে। ভারতের মতো দেশে এই প্রক্রিয়া ক্রমবর্ধমান গতিতে চলমান যা বয়স্ক মানুষের জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। সঠিক স্বাস্থ্য পরিসেবার সুযোগ নিতে না পারায় দীর্ঘ রোগ ভোগের জ্বালা সহ্য করে তারা মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। প্রতিদিনই চিকিৎসার খরচ বাড়ছে, বাড়ছে রোগ নিরাময় পদ্ধতির খরচ। ওষুধের দামের লাগামহীনতা একশ্রেণীর কালোবাজারিদের মুনাফা লাভের সুযোগ করে দিয়েছে যার ফলে ওষুধের সংস্থান করা কঠিন হয়ে পড়ছে এইসব দরিদ্র পরিবার গুলোর। অগত্যা এইসব দরিদ্র পরিবারগুলি বয়স্ক মানুষেরা চিকিৎসা পরিষেবা বিনা দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে এটা প্রায়শই দেখা যায় যে দরিদ্র পরিবারে বয়স্ক মানুষটি খুব সামান্য অসুখে ভুগলে ও তার জন্য সঠিক চিকিৎসা থেকে সে বঞ্চিত হয়।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবীণ ও বয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা উন্নত দেশগুলির তুলনায় কিছুটা আলাদা। এখানে দেখা যায় যে বয়স্করা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আর্থারাইটিস, বাত, অপুষ্টি ও রক্তাল্পতা ইত্যাদির পাশাপাশি মধুমেহ, হার্টের অসুখ ইত্যাদি নানা অসুখে ভোগে। এসব অসুখ এর অধিকাংশই পুষ্টিকর খাবারের অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, কিছুটা অসচেতনতা থেকে আসে যদিও বর্তমানে ভারতে ক্যান্সার ও হার্টের অসুখ বয়স্ক তথা পরিণত জনসংখ্যার মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরকারের কি করণীয়?
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এর পরেই যে দুটি মৌলিক চাহিদা এসে পড়ে তা হল শিক্ষা ও সহজলভ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা। ভারতবর্ষে এই সহজলভ্য স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল বেশ খারাপ। তীব্র দারিদ্র্য সেই অবস্থা কে আরও জটিল করে তুলেছে। গ্রাম ও শহর উভয় জায়গায় দরিদ্র মানুষগুলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে কিছুটা তাদের অসচেতনতা, কিছুটা সরকারী উদাসীনতা।
একথা সত্যি যে প্রবীণ নাগরিক রা অধিকাংশই অকর্মক্ষম তাই বোঝা হয় দেশের অর্থনীতির উপরে, বাড়ায় নির্ভরতার অনুপাত, অনুৎপাদনশীল এই সব মানুষ চাপ বাড়ায় অর্থনীতির উপরে। কিন্তু জীবনের অনেক টা সময় এরা তো দেশকে এগিয়ে দিয়েছে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা দিয়ে, তাই শেষ জীবনে এদের কি একটু ফ্রি স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার অধিকার নেই দেশের কাছে? উত্তর হল অবশ্যই আছে। তাহলে এবার প্রশ্ন এসে পড়ে, কিভাবে? এমন উন্নয়নশীল স্বল্প অর্থনীতির দেশে (আমেরিকা যেখানে 25 কোটির দেশ কিন্তু অর্থনীতি 12 ট্রিলিয়ন; ভারত 120 কোটির দেশ কিন্তু অর্থনীতি 3 ট্রিলিয়ন- মাথাপিছু সম্পদ ও আয় অনেক অনেক কম) বিপুল সংখ্যক কর্মক্ষম হীন প্রবীণ মানুষের ফ্রী স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া কি সম্ভব? ট্রিলিয়নের উপর যদি এই সংখ্যার অধিকাংশই হয় দরিদ্র থেকে অতি দরিদ্র? উত্তরটা অত সহজে দেওয়া সম্ভব নয়। যেখানে সাধারণ শিশু থেকে যুবক জনসংখ্যা সঠিক চিকিৎসা পায়না সেখানে প্রবীণ নাগরিকের ফ্রী চিকিৎসা? যৎসামান্য কারনে এখনও শত শত নবজাতকের মৃত্যু হয়, প্রসবকালীন মৃত্যু হয় হাজার হাজার মায়ের (যদিও উন্নত বিশ্ব এই দুই প্রকার মৃত্যু প্রায় শূন্যতে নামিয়ে আনতে পেরেছে) সেখানে পরিবার সমাজ ও অর্থনীতির বোঝা বয়স্ক জনসংখ্যার জন্য কি আশা করা যায়! তার সঙ্গে আছে অশিক্ষা, কুসংস্কার, নানা অন্ধবিশ্বাস, অসচেতনতা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিয়ে অজ্ঞতা, ইত্যাদি যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে।
তাহলে এখন প্রশ্ন সরকার কি করছে, সরকারের কি কোনও খামতি রয়েছে? উত্তর অবশ্যই হ্যাঁ। হ্যাঁ সরকার শুধু এদের জন্য ই নয় শিশু, মা, যুবক তথা বয়স্ক সবার জন্য সুস্বাস্থ্য পরিষেবা র ব্যবস্থা করবে এটা বলাই যায় এবং সেটা নানা ভাবে হতে পারে। দরকার সঠিক ও শিক্ষিত পরিকল্পনা! সেটা কেমন?
সরকারী হাসপাতালের পরিকাঠামো আরও উন্নত করতে হবে। প্রতিটি ব্লক এ একটি করে হাসপাতাল আছে, সেটিকে বর্তমান জেলা হাসপাতালের স্তরে উন্নীত করতে হবে ও যথেষ্ট সংখ্যায় প্রশিক্ষিত নার্স ও ডাক্তার নিয়োগ করতে হবে। এতে মানুষের অভিগম্যতা বাড়বে। শিশু, প্রসূতি ও সাধারন ওয়ার্ড এর পাশাপাশি বয়স্ক মানুষের জন্য পৃথক বহির্বিভাগ চালু করতে হবে। এটা সরকারের সামাজিক কর্তব্য বলে আমি মনে করি।
বয়স্ক নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য যোজনা কার্ড এর ব্যবস্থা করবে সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর। এজন্য দরকার পরিকল্পনা। প্রচার ও জনপ্রিয়তা বাড়ানোর কাজ ন্যস্ত করা যেতে পারে এন জিও দের উপরে।
কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল সংস্থা কে বাধ্যতামূলক ভাবে বয়স্ক বহির্বিভাগ চালু করতে হবে। নজরদারি নিয়মিত সরকারী স্বাস্থ্য দপ্তর করবে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট প্রদান করবে।
প্রতিটি ব্লক এ যেসব এন জিও সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত তাদের কে ও সরকার বয়স্কদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানে উৎসাহিত করতে পারে। প্রত্যন্ত গ্রামে এন জিও গুলি বয়স্ক নাগরিক সমীক্ষা করবে ও সেই মত সরকারকে রিপোর্ট দেবে। এন জিও গুলিই ওইসব বয়স্ক মানুষদের স্বাস্থ্য কার্ড পেতে সাহায্য করবে। গ্রামে গ্রামে এই জন্যে স্বাস্থ্যশিবির করা যেতে পারে।
উপরিউক্ত বিষয় গুলিকে বর্তমান প্রচলিত স্বাস্থ্য মিশন এর আওতাভুক্ত করে সহজেই রূপায়িত করা যেতে পারে।
জনস্বাস্থ্য ব্যাপারটা ঠিক করতে গেলে আগে দরকার মানুষের আয় বাড়ানোর। আর সেটা সম্ভব যদি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতি হয় এবং একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমে। এর জন্য দরকার গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ণ ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের উন্নয়ন। সার্বিক শিক্ষার প্রসার ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ও একই সঙ্গে হতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ বেশি বেশি করে হতে হবে। দেশের শ্রমিক শ্রেণীর আয় বাড়ানোর দরকার। খয়রাতি রাজনীতি থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সরে এসে প্রকৃত ব্যক্তি আয় বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।
এখনও ভারতবর্ষে একটা বিরাট জনসংখ্যা আর্থিক ও মানুষিক দিক থেকে পিছিয়ে, ফলে তারা আর্থিক দুর্দশার মধ্যে জীবন যাপন করে এবং সেটাই তাদের ভবিতব্য মেনে নিয়েছে। দারিদ্র, শারীরিক অসুস্থতা, এমনকি অন্য কোন কারণে নিজের জীবনের অসহায়তা এরা অদৃষ্টের পরিনাম বলে মনে করে। এটা বদলানো দরকার। প্রান্তিক মানুষ দের জীবন ও পেশাগত উন্নয়ন ঘটানো দরকার।
এখানে একটি কথা না বললেই নয় এবং সেটা হলো যে যেকোনো সামাজিক সমস্যা- সেটা চিকিৎসা পরিষেবা হোক বা দারিদ্র, গণ অর্থনীতি (পিপলস ইকোনমি) মজবুত না হলে এইসব সমস্যার সমাধান সহজ হবে না। আর এই সমাধানের পথ কি সেটা বুঝতে হলে অমর্ত্য সেন, মুহাম্মদ ইউনূস, অভিজিৎ ব্যানার্জি দের দরিদ্র অর্থনীতি কে বুঝতে হবে ও তাদের দেখানো পথে সরকারকে পদক্ষেপ করতে হবে। কিভাবে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে থাকা গ্রামীণ ও গরীব মানুষগুলোর আয় বাড়ানো যায় সেটা দেখতে হবে। কল্যাণমূলক অর্থনীতি দেশকে অনুসরণ করতে হবে। মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে চিকিৎসা পরিষেবার মত ইমার্জেন্সি পরিষেবা সহ অনেক সামাজিক সমস্যা আপনাআপনিই দূরীভূত হয় এটা প্রমাণিত সত্য। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক নীতি কখনোই সামাজিক সুরক্ষা তথা অর্থনৈতিক সাম্য আনতে পারবে না- এটা সরকার যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই মঙ্গল।
আমাদের কি করণীয়?
দেশের তথা সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে আমরা যারা একটু সচ্ছল তাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয় কেই এক্ষেত্রে নিজনিজ ও ভূমিকা পালন করা দরকার। আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজ নিজ এলাকায় যদি একটু সময় দিয়ে সাধারণ গরিব মানুষ গুলোকে চিকিৎসার সুযোগ এর ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করতে পারি তাহলেও সেটা অনেকটা করা হবে। তাছাড়া বিভিন্ন মানুষ একত্রে দলবদ্ধ হয়ে এনজিও তৈরি করেও এই কাজটি করতে পারে।
বিভিন্ন ক্লাব সর্বত্র সব সমাজেই তৈরি হয়েছে এবং তারা ইতিমধ্যেই খেলাধুলার পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক কাজ করে থাকে, যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রক্তদান শিবির আয়োজন। এই সমস্ত ক্লাব গুলি যদি আরেকটু বেশি দায়িত্ববান হয়ে ওঠে এবং কিছু কিছু সামাজিক কাজকর্ম করে, যেমন স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ, প্রবীণ নাগরিক স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন ও পরিচালনা, বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা, কোঅপারেটিভ সোসাইটি তৈরি করা ও সেগুলোর মাধ্যমে নানান অর্থনৈতিক উদ্যোগ মূলক কাজ করা।
ছোট-বড় নানান প্রতিষ্ঠান যারা সমাজে ব্যবসা করছে ও নিজেদের অর্থনৈতিক সংস্থান করছে তারাও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারে এবং সরকারি নির্দেশনামাই আছে এব্যাপারে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি যার নাম। যদিও বর্তমানে এই নির্দেশ নামা আওতায় কিছু বৃহৎ প্রতিষ্ঠান গুলোই পড়ে। এই আইনের পরিবর্তন সাধন করে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা গেলে ও তাদের দিয়ে কিছু সামাজিক কাজ করিয়ে নেওয়া গেলে অনেকটাই করা হবে।
No comments:
Post a Comment