Tuesday, November 11, 2025

জেট স্ট্রিম (Jet Streams): সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, ধরন ও গুরুত্ব


জেট স্ট্রিম (Jet Streams): সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, ধরন ও গুরুত্ব

সংজ্ঞা

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO)-এর মতে,
জেট স্ট্রিম হলো — “উপরের ট্রপোস্ফিয়ার বা স্ট্রাটোস্ফিয়ারে প্রায় অনুভূমিক অক্ষে কেন্দ্রীভূত একটি সংকীর্ণ কিন্তু শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ, যেখানে উল্লম্ব ও পার্শ্বীয় দিকের বায়ু গতির পার্থক্য (wind shear) খুব বেশি দেখা যায় এবং এক বা একাধিক সর্বোচ্চ বেগবিশিষ্ট অংশ থাকে।”

সহজভাবে বললে,
জেট স্ট্রিম হলো বাতাসের দ্রুতগামী, সংকীর্ণ ফিতা বা ব্যান্ড, যা পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহ মূলত পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে (Coriolis effect) সৃষ্টি হয়। জেট স্ট্রিম গঠিত হয় তখন, যখন ভিন্ন তাপমাত্রার দুটি বড় বায়ুস্তরের সংযোগস্থলে তীব্র তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা যায়।

জেট স্ট্রিম হলো জিওস্ট্রফিক বায়ুপ্রবাহ, অর্থাৎ এটি চাপের পার্থক্য (pressure gradient) ও কোরিওলিস বলের (Coriolis force) মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ গতিতে প্রবাহিত হয়।
দুটি বায়ুমণ্ডলের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য যত বেশি, জেট স্ট্রিমের বেগও তত বেশি হয়।

জেট স্ট্রিমের সৃষ্টি তিনটি প্রধান পার্থক্যের কারণে হয়—

  1. তাপমাত্রার পার্থক্য (মেরু ও নিরক্ষরেখার মধ্যে),
  2. চাপের পার্থক্য (মেরু ও নিরক্ষরেখার মধ্যে),
  3. মেরু অঞ্চলে পৃষ্ঠ ও নিম্নস্তরের বায়ুচাপের পার্থক্য।


বৈশিষ্ট্যসমূহ (Characteristics)

1. উচ্চতা ও অবস্থান

জেট স্ট্রিম বায়ুমণ্ডলের বেশ উঁচু স্তরে থাকে, সাধারণত ৯ থেকে ১৬ কিলোমিটার (৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ ফুট) উচ্চতায়, অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মাঝামাঝি স্থানে (ট্রপোপজের কাছে)।

  • পোলার জেট স্ট্রিম সাধারণত ৯ কিমি বা ৩০,০০০ ফুট উচ্চতায় (২৫০ hPa স্তরে) থাকে।
  • সাবট্রপিক্যাল জেট স্ট্রিম তুলনামূলকভাবে আরও উঁচুতে অবস্থান করে।

উত্তর গোলার্ধে সাবট্রপিক্যাল জেট প্রায় ২০°N–৫০°N এবং পোলার জেট প্রায় ৩০°N–৭০°N অক্ষাংশে দেখা যায়।

2. বেগ (Wind Speed and Velocity)

জেট স্ট্রিমের বাতাসের গতি অত্যন্ত বেশি — সাধারণত ১৫০ থেকে ৩০০ কিমি/ঘণ্টা,
কখনও কখনও ২০০ কিমি/ঘণ্টা বা তারও বেশি (প্রায় ১২০–২৫০ নট)।

  • শীতকালে গতি প্রায় ১২০ কিমি/ঘণ্টা,
  • গ্রীষ্মে গতি নেমে আসে প্রায় ৫০ কিমি/ঘণ্টা।

বিশেষ করে শীতকালে, পোলার ও সাবট্রপিক্যাল জেট একত্রিত হলে গতি প্রায় ৩০০ নট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।



3. আয়তন (Spatial Dimensions)

জেট স্ট্রিম হলো খুবই সংকীর্ণ বায়ুপ্রবাহের ব্যান্ড।
এটির প্রস্থ প্রায় ৪০ কিমি এবং পুরুত্ব মাত্র ২–৩ কিমি।
অর্থাৎ, এটি বৃহৎ বায়ুচলাচলের তুলনায় অনেক বেশি কেন্দ্রীভূত বা ঘন।

4. প্রবাহের ধরন (Flow Pattern and Behavior)

জেট স্ট্রিম কখনো সরল রেখায় প্রবাহিত হয় না।
এটি তরঙ্গাকৃতি (wavelike) বা প্যাঁচানো (meandering) পথে চলে,
যাকে Rossby Wave বলে।
এই তরঙ্গের শীর্ষ (ridge) অংশ উষ্ণ বায়ু ও উচ্চচাপ নির্দেশ করে,
আর তল (trough) অংশ ঠান্ডা বায়ু ও নিম্নচাপ নির্দেশ করে।
বাতাসের সর্বোচ্চ গতি সাধারণত এই শীর্ষ ও তলের কাছেই দেখা যায়।

5. ঋতুভিত্তিক পরিবর্তন (Seasonal Variability)

জেট স্ট্রিমের অবস্থান, বেগ ও বিস্তৃতি ঋতুভেদে পরিবর্তিত হয়।

  • গ্রীষ্মে এটি উত্তর দিকে সরে যায় ও দুর্বল হয়।
  • শীতে এটি দক্ষিণ দিকে নেমে আসে ও শক্তিশালী হয়।

অর্থাৎ, জেট স্ট্রিম “সূর্যকে অনুসরণ করে”—
গোলার্ধ উষ্ণ হলে উত্তরে সরে যায়, ঠান্ডা হলে দক্ষিণে নামে।

6. বৃত্তাকার প্রকৃতি (Circumpolar and Zonality)

জেট স্ট্রিমকে সার্কাম্পোলার প্রবাহও বলা হয়,
কারণ এটি পৃথিবীর মেরুগুলির চারপাশে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরে চলে।
এটি সাধারণত ২০° অক্ষাংশ থেকে মেরু পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান করে।


গুরুত্ব (Significance of Jet Streams)

1. নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণিঝড় (Temperate Cyclone) সৃষ্টি ও গতি

জেট স্ট্রিমের সঙ্গে মধ্য অক্ষাংশের ঘূর্ণিঝড়ের (Temperate Cyclone) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
জেট স্ট্রিমের তরঙ্গের রিজ (ridge) অংশে উচ্চচাপ ও ট্রফ (trough) অংশে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।
এই কারণে মেঘ, বৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ও গতি জেট স্ট্রিম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
বিশেষ করে ৬০° অক্ষাংশের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে এটি আবহাওয়াকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।

2. তাপ পরিবহন ও বৈশ্বিক তাপসমতা (Heat Transfer and Global Climate Balance)

জেট স্ট্রিম পৃথিবীর উষ্ণ ও শীতল অঞ্চলের মধ্যে তাপের আদান-প্রদান ঘটায়।
এই প্রবাহের উত্তর-দক্ষিণ দোলন (oscillation) উষ্ণ অঞ্চল থেকে ঠান্ডা অঞ্চলে তাপ পরিবহন করে,
ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ থাকে, যদিও সূর্যালোকের বণ্টন অসম।

3. মৌসুমী বায়ুর প্রক্রিয়া (Mechanism of Monsoon)

জেট প্রবাহ (Jet Stream) বা উচ্চস্তরের বায়ুপ্রবাহ মৌসুমী বায়ুর আগমন, তীব্রতা এবং প্রস্থান—এই তিনটির উপরই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
বিশেষ করে ভারতীয় মৌসুমী বায়ু ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

4. মৌসুমী বায়ুর আগমন (Onset of Monsoon)

জুন মাসের প্রথম দিকে, উপউষ্ণ পশ্চিমী জেট প্রবাহ (Subtropical Westerly Jet Stream) সম্পূর্ণভাবে ভারতবর্ষ থেকে সরে গিয়ে প্রায় ৪০° উত্তর অক্ষাংশে, তিব্বত মালভূমির উত্তরে অবস্থান নেয়।
এই সরে যাওয়াই ভারতে হ্যাডলি বায়ু কোষ (Hadley Cell) গঠনের পূর্বশর্ত তৈরি করে।

ফলে দক্ষিণ দিক থেকে আর্দ্র ও উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয়ে আসে, যা আমরা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু নামে জানি।
এই বায়ু ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল থেকে প্রবেশ করে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয় এবং বৃষ্টি নিয়ে আসে।

5. শীতকালীন বৃষ্টিপাত (Winter Rainfall)

শীতকালে একই উপউষ্ণ পশ্চিমী জেট প্রবাহ আবার ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশে সক্রিয় হয়।
এর ফলে পশ্চিমী বিপর্যয় (Western Disturbances) নামের নিম্নচাপীয় ব্যবস্থা উত্তর ভারতে আসে এবং শীতকালীন বৃষ্টিপাত ঘটায় — বিশেষ করে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে।

6. ক্রান্তীয় পূর্বীয় জেট প্রবাহ (Tropical Easterly Jet Stream)

এই জেট প্রবাহ গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ুকে আরও শক্তিশালী করে।
এটির বাম দিকের অংশে বায়ু নিচে নামায় (অবতরণ করে), ফলে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের উপর উচ্চচাপ তৈরি হয়। অন্যদিকে, ডান দিকের অংশে বায়ু ওপরে উঠে, ফলে উত্তর ভারতের সমভূমিতে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।
এইভাবে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে চাপের পার্থক্য বৃদ্ধি পায় এবং মৌসুমী বায়ুর প্রবাহ আরও জোরদার হয়।

7. আবহাওয়া পূর্বাভাস ও বিমান চলাচল (Weather Forecasting and Aviation)

জেট প্রবাহের নিয়মিত স্থান পরিবর্তন — অর্থাৎ এর উত্তর-দক্ষিণে সরানো — মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দেয়। তাই এটি দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাসে অত্যন্ত কার্যকর একটি উপাদান।

বিমান চলাচলে এই জেট প্রবাহের গুরুত্বও অনেক —

  • বিমান যদি জেট প্রবাহের দিকেই উড়ে (পশ্চিম থেকে পূর্ব), তবে সময় ও জ্বালানি দুটোই বাঁচে।
  • কিন্তু বিপরীত দিকে উড়লে, প্রবল বায়ুপ্রবাহের কারণে হঠাৎ কম্পন বা বায়ুচঞ্চলতা (turbulence) দেখা দিতে পারে, এমনকি যখন নিচের আবহাওয়া একদম শান্ত থাকে।

8. বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন ও ওজোন স্তর (Atmospheric Chemistry and Ozone Layer)

জেট প্রবাহ অনেক সময় ওজোন স্তর ক্ষয়কারী পদার্থ (ozone-depleting substances) উপরের স্তরে নিয়ে যায়, ফলে ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এছাড়াও, এই প্রবাহ কিছু আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্প স্ট্রাটোস্ফিয়ার পর্যন্ত নিয়ে যায়, যার ফলে নকটিলুসেন্ট মেঘ (Noctilucent Clouds) তৈরি হয়। এগুলো হলো উপরের বায়ুমণ্ডলে বরফের স্ফটিক দিয়ে গঠিত হালকা উজ্জ্বল নীলচে মেঘ,
যা সাধারণত গভীর গোধূলি আকাশে দেখা যায়।

9. বায়ুপ্রবাহের ওঠানামা ও ঘূর্ণিঝড়-প্রতিঘূর্ণিঝড়ের চক্র (Cyclone–Anticyclone Cycles)

জেট প্রবাহের ঢেউ বা তরঙ্গাকৃতি গতিবিধির কারণে বায়ু কখনও উচ্চচাপ (Anticyclone), কখনও নিম্নচাপ (Cyclone) সৃষ্টি করে।
বায়ুপ্রবাহ চলাকালীন সময়ে বায়ুমণ্ডল কখনও প্রসারিত (Expansion), কখনও সংকুচিত (Compression) হয়, ফলে বিকল্পভাবে উচ্চ ও নিম্নচাপীয় অবস্থা তৈরি হয়, যা আবহাওয়া পরিবর্তনের মূল কারণ।


জেট প্রবাহের সৃষ্টি ও গতিশীলতার প্রক্রিয়া (Mechanisms of Jet Stream Formation and Dynamics)

🔹 তাপীয় বায়ুপ্রবাহ ও চাপের পার্থক্য (Thermal Wind Relation and Pressure Gradients)

জেট প্রবাহ মূলত বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার পার্থক্য থেকে তৈরি হয়। যেখানে ঠান্ডা ও গরম বায়ুস্তরের মধ্যে তীব্র তাপমাত্রার পার্থক্য থাকে, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই চাপের তীব্র পার্থক্য (Pressure Gradient) গঠিত হয়।

এই চাপের পার্থক্য যত বেশি, বাতাসের গতি তত শক্তিশালী হয় — এবং এর ফলেই জেট প্রবাহের দ্রুত বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়।

বায়ুমণ্ডল বিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো “তাপীয় বায়ু সম্পর্ক” (Thermal Wind Relation) — যা বলে যে, উল্লম্ব দিকের বায়ুর গতির পরিবর্তন (Vertical Wind Shear) ক্ষেত্রে আনুভূমিক তাপমাত্রার পার্থক্যের (Horizontal Temperature Gradient) সঙ্গে সম্পর্কিত।

অর্থাৎ, যত বেশি তাপমাত্রার পার্থক্য → তত বেশি চাপের পার্থক্য → তত দ্রুত বায়ুপ্রবাহ (Jet Stream)। এই প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় মেরু ফ্রন্টে (Polar Front), যেখানে ঠান্ডা মেরু বায়ু ও উষ্ণ ক্রান্তীয় বায়ুর সংঘর্ষ ঘটে।

🔹 রসবি তরঙ্গ ও জেট প্রবাহের বাঁকানো গতি (Rossby Wave Formation and Meandering)

জেট প্রবাহ যখন পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে চলে, তখন পৃথিবীর ঘূর্ণনজনিত কোরিওলিস বলের (Coriolis Effect) তার উপর ভিন্ন প্রভাব ফেলে অক্ষাংশ অনুযায়ী।
এর ফলেই জেট প্রবাহ সরল পথে না গিয়ে
তরঙ্গাকৃতি বা বাঁকানো পথ (Meandering) অনুসরণ করে, যাকে বলা হয় রসবি তরঙ্গ (Rossby Waves)

এই তরঙ্গের ফলে বায়ুমণ্ডলে

  • উষ্ণ, উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল (Ridge) মেরুর দিকে প্রসারিত হয়,
  • আর ঠান্ডা, নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চল (Trough) নিরক্ষরেখার দিকে নেমে আসে।

এভাবেই জেট প্রবাহের ওঠানামা বা বাঁক (meanders) বায়ুমণ্ডলে ঘূর্ণিঝড় (Cyclone)প্রতিঘূর্ণিঝড় (Anticyclone) সৃষ্টি করে।

জেট প্রবাহের এই বাঁকানো গতি একেবারে সরল নয়, বরং এটি জটিল প্রক্রিয়ার ফল, যেখানে তাপের আদান-প্রদান, আর্দ্রতা, বায়ুর ঘূর্ণন (Vorticity) এবং বায়ুতে উপস্থিত সূক্ষ্ম কণিকা (Aerosols) একসাথে ভূমিকা রাখে।

মেরুর দিকে গমনকালে বায়ু তাপ মুক্ত করে (Latent Heat Release), আর নিরক্ষরেখার দিকে নেমে এলে শীতল হয় (Cooling by Radiation) — এই দুই প্রক্রিয়াই জেট প্রবাহের ওঠানামা বজায় রাখে।

🔹 কোরিওলিস বল ও কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ (Coriolis Effect and Angular Momentum Conservation)

কোরিওলিস বল (পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলাফল) জেট প্রবাহের গঠন ও আচরণে প্রধান ভূমিকা রাখে।

নিরক্ষরেখার কাছে বাতাস পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে সবচেয়ে দ্রুত চলে, এবং যখন এই বাতাস উত্তর বা দক্ষিণে সরে যায়, তখন কোরিওলিস বলের কারণে এটি দিক পরিবর্তন করে —

  • উত্তর গোলার্ধে: ডান দিকে বেঁকে যায়
  • দক্ষিণ গোলার্ধে: বাম দিকে বেঁকে যায়

এই বেঁকে যাওয়া বায়ু প্রায় ৩০° অক্ষাংশে কেন্দ্রীভূত হয়ে উপউষ্ণ পশ্চিমী জেট প্রবাহ (Subtropical Jet Stream) তৈরি করে।

বায়ু যখন মেরুর দিকে অগ্রসর হয়, তখন এটি তার কৌণিক ভরবেগ (Angular Momentum) বজায় রাখে, ফলে গতি ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং উচ্চ গতিসম্পন্ন সংকীর্ণ বায়ুপ্রবাহ তৈরি হয় — যেটিই আমরা জেট প্রবাহ নামে চিনি।


জেট প্রবাহের ধরন (Types of Jet Streams)

জেট প্রবাহকে তাদের অবস্থান, উচ্চতা, উৎপত্তি প্রক্রিয়া ও মৌসুমী বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভাগ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো —


🌤️ উপউষ্ণ পশ্চিমী জেট প্রবাহ (Subtropical Westerly Jet Stream – STJ)

উৎপত্তি (Formation and Origin)

এই জেট প্রবাহ মূলত সৃষ্টি হয় —

  • পৃথিবীর ঘূর্ণনজনিত বল (Coriolis Force) এবং
  • ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের তাপমাত্রার পার্থক্য থেকে।

নিরক্ষরেখার কাছাকাছি পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে বাতাসের গতি সর্বাধিক হয়।
এই উষ্ণ বায়ু ওপরে উঠে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং গতি ধরে রাখে।
এটি কোরিওলিস প্রভাবে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে, দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।
প্রায় ৩০° অক্ষাংশে এই বায়ু কেন্দ্রীভূত হয়ে উপউষ্ণ পশ্চিমী জেট প্রবাহ তৈরি করে।

এটি মূলত হ্যাডলি কোষের (Hadley Cell) শেষ প্রান্তে গঠিত হয়,
যেখানে উষ্ণ বায়ু ট্রপোস্ফিয়ারের উপরের স্তরে পৌঁছে ঠান্ডা হয়ে নীচে নেমে আসে।
এই প্রক্রিয়ায় বায়ু তার কৌণিক ভরবেগ (Angular Momentum) ধরে রাখে,
ফলে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।

🔹 বৈশিষ্ট্য (Characteristics)

  • এটি সাধারণত ৩০° অক্ষাংশে উভয় গোলার্ধে অবস্থান করে।
  • এর উচ্চতা প্রায় ১০ থেকে ১৬ কিলোমিটার,
  • গতি প্রায় ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
  • শীতকাল ও বসন্তের শুরুতে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী হয় — কখনও ৩০০ নট পর্যন্ত গতি পেতে পারে,
    বিশেষত যখন এটি মেরু ফ্রন্ট জেট প্রবাহের (Polar Front Jet Stream) সঙ্গে মিলিত হয়।

এটির সঙ্গে সাধারণত নিম্নগামী বায়ু (Subsiding Air) যুক্ত থাকে,
যার ফলে এর নিচের অঞ্চলগুলোতে পরিষ্কার ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে।

  • শীতকালে এটি উভয় গোলার্ধে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সক্রিয় থাকে।
  • দক্ষিণ গোলার্ধে এটি সারা বছরই বিদ্যমান।
  • কিন্তু উত্তর গোলার্ধে এটি গ্রীষ্মকালে দুর্বল হয়ে উত্তরে সরে যায়।

যখন মাঝারি অক্ষাংশের ট্রফ (Trough) অংশ উপউষ্ণ অঞ্চলে প্রসারিত হয়,
তখন এই উপউষ্ণ জেট প্রবাহ অস্থায়ীভাবে অবস্থান পরিবর্তন করে,
এবং মাঝে মাঝে মেরু ফ্রন্ট জেট প্রবাহের সঙ্গে একীভূত হয়।

🔹 গুরুত্ব (Significance)

এই উপউষ্ণ জেট প্রবাহ ভারতের ও আফ্রিকার গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ুর (Monsoon) সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
শীতকালে এটি হিমালয়ের দক্ষিণ ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয়,
আর গ্রীষ্মকালে উত্তর দিকে সরে যায়।

  • জুনের শুরুতে, এটি হিমালয়ের কিনারা বরাবর প্রবাহিত হয়।
  • জুলাই–আগস্ট মাসে (দেরি গ্রীষ্মে), এটি তিব্বত মালভূমির উত্তর প্রান্ত বরাবর চলে যায়।

শীতকালে এই জেট প্রবাহ ভারতের উত্তর-পশ্চিমে পশ্চিমী বিপর্যয় (Western Disturbances) বয়ে আনে,
ফলে উত্তর ভারতে শীতকালীন বৃষ্টিপাত ঘটে।


❄️ মেরু ফ্রন্ট জেট প্রবাহ (Polar Front Jet Stream – PFJ)

🔹 উৎপত্তি ও গঠন (Origin and Formation)

মেরু ফ্রন্ট জেট প্রবাহ গঠিত হয় মেরু অঞ্চলের ঠান্ডা বায়ু ও মধ্য অক্ষাংশের উষ্ণ বায়ুর সংঘর্ষস্থলে।
এই দুটি ভিন্ন তাপমাত্রার বায়ুমণ্ডলের সংযোগস্থলকে বলা হয় মেরু ফ্রন্ট (Polar Front)।

এখানে ঘন ঠান্ডা বায়ু উষ্ণ বায়ুর নিচে ঢুকে পড়ে,
ফলে উত্তর-দক্ষিণ দিকে তীব্র চাপের পার্থক্য (Pressure Gradient) সৃষ্টি হয়।
এটাই মেরু ফ্রন্ট জেট প্রবাহের জন্ম দেয়।

উচ্চ স্তরে ঘর্ষণ কম থাকায় বাতাস সহজেই চাপের পার্থক্যের দিকে সাড়া দেয় এবং
কোরিওলিস বলের প্রভাবে (Coriolis Effect) পূর্বমুখী প্রবাহ তৈরি করে,
যা ‘প্রায়-জিওস্ট্রফিক প্রবাহ (Quasi-Geostrophic Flow)’ নামে পরিচিত।

এই প্রবাহ মধ্য অক্ষাংশে ঘূর্ণিঝড় (Cyclone) ও প্রতিঘূর্ণিঝড় (Anticyclone) গঠনে প্রধান ভূমিকা রাখে।

🔹 বৈশিষ্ট্য (Characteristics)

  • অবস্থান: ৫০° থেকে ৭০° অক্ষাংশে উভয় গোলার্ধে
  • উচ্চতা: ৭ থেকে ১২ কিলোমিটার
  • গতি: সর্বাধিক ২৫০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত
  • শীতকালে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়, কারণ তখন তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি থাকে
  • অবস্থান পরিবর্তনশীল:
    • গ্রীষ্মে মেরুর দিকে সরে যায়,
    • শীতে নিরক্ষরেখার দিকে নামে

মেরু ও উপউষ্ণ জেট প্রবাহ অনেক সময় একত্রিত হয়, আবার কখনও আলাদা থাকে।

🔹 গুরুত্ব (Significance)

  • এটি মধ্য অক্ষাংশের ঘূর্ণিঝড়ের পথ, গতি ও তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • প্রায় ৬০° অক্ষাংশের কাছাকাছি অঞ্চলের আবহাওয়া এই জেট প্রবাহ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
  • এটি আবহাওয়া পূর্বাভাসে সবচেয়ে আলোচিত জেট প্রবাহগুলোর একটি।

🌞 ক্রান্তীয় পূর্বীয় জেট প্রবাহ (Tropical Easterly Jet Stream – TEJ)

🔹 উৎপত্তি ও গঠন (Origin and Formation)

এই প্রবাহ সাধারণত ক্রান্তীয় বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে (ট্রপোপজের কাছাকাছি) গঠিত হয়।
এটি জুন মাসের শেষ দিকে শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বরের শুরু পর্যন্ত থাকে।

অন্য সব জেট প্রবাহ যেখানে পশ্চিম থেকে পূর্বে চলে, সেখানে TEJ চলে পূর্ব থেকে পশ্চিমে —
অর্থাৎ এটি বিপরীত প্রবাহ (Reversal Flow)।

এর গঠন ঘটে মূলত তিব্বত মালভূমির প্রবল উষ্ণতা ও উচ্চতার কারণে।
গ্রীষ্মে সূর্যের তাপ তিব্বত মালভূমিকে প্রচণ্ডভাবে গরম করে,
ফলে উপরিস্তরের বায়ুতে তাপীয় বিক্ষোভ ঘটে এবং এই জেট প্রবাহের সৃষ্টি হয়।

এটি ভারতীয় মৌসুমী বায়ুর আগমন ও শক্তি নির্ধারণে সরাসরি ভূমিকা রাখে।

🔹 বৈশিষ্ট্য (Characteristics)

  • অবস্থান: প্রায় ১০°N থেকে ২০°N অক্ষাংশে
  • কেন্দ্র: ১৫° উত্তর অক্ষাংশে ও ৫০°–৮০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে
  • উচ্চতা: ১২–১৭ কিলোমিটার
  • গতি: সর্বাধিক ১৪০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত
  • সময়কাল: জুলাই–সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে সক্রিয়

এই প্রবাহ ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে,
কারণ এটি উপরের স্তরে প্রবল বায়ু কেটে দেয় (vertical wind shear)।

🔹 গুরুত্ব (Significance)

  • TEJ এশীয় গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ুর মূল চালিকা শক্তি।
  • এটি তিব্বত মালভূমি থেকে নির্গত উষ্ণ বায়ুপ্রবাহকে ভারতে নিয়ে আসে।
  • যখন TEJ শক্তিশালী হয় → তখন ভারতে বৃষ্টিপাত বেশি হয়।
  • TEJ দুর্বল হলে → বৃষ্টি কমে যায়।

অর্থাৎ, TEJ ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর সূচনা ও তীব্রতা নির্ধারণে মূল ভূমিকা রাখে।


🌌 মেরু রাত্রি জেট প্রবাহ (Polar Night Jet Stream – PNJ)

🔹 উৎপত্তি ও গঠন (Origin and Formation)

এটি মূলত স্তরোস্ফিয়ার (Stratosphere)-এ ঘটে,
বিশেষ করে মেরু অঞ্চলে শীতকালীন রাত্রি বা “Polar Night”-এর সময়।

যখন মেরু অঞ্চলে সূর্যালোক আসে না, তখন সেখানে বাতাস খুব ঠান্ডা হয়ে যায়,
আর নিরক্ষরেখার বাতাস তুলনামূলকভাবে উষ্ণ থাকে।
এই তীব্র তাপমাত্রার পার্থক্য থেকে প্রচণ্ড চাপের পার্থক্য সৃষ্টি হয়,
ফলে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বয়ে চলা প্রবল বায়ুপ্রবাহ গঠিত হয় —
এটাই মেরু রাত্রি জেট প্রবাহ।

এটি মেরু ঘূর্ণিবায়ু (Polar Vortex)-এর অংশ,
যা মেরু অঞ্চলের চারপাশে বায়ু আবদ্ধ করে রাখে।

🔹 বৈশিষ্ট্য (Characteristics)

  • উচ্চতা: প্রায় ৫০ কিলোমিটার (স্তরোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের সীমা)
  • অবস্থান: ৬০° অক্ষাংশের আশেপাশে
  • এটি ট্রপোস্ফিয়ারের জেট প্রবাহের মতো নয়; এটি স্তরোস্ফিয়ারের একটি পৃথক প্রক্রিয়া
  • মেরু ঘূর্ণিবায়ুর মধ্যে ঠান্ডা বায়ু আটকে থাকে, উষ্ণ বায়ু ভিতরে ঢুকতে পারে না

🔹 গুরুত্ব (Significance)

  • এটি স্তরোস্ফিয়ার ও ট্রপোস্ফিয়ারের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে।
  • কখনও কখনও হঠাৎ স্তরোস্ফিয়ারীয় উষ্ণায়ন (Sudden Stratospheric Warming)-এর ঘটনা ঘটে,
    যা মেরু রাত্রি জেট প্রবাহ দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং
    পৃথিবীর নিম্নস্তরের আবহাওয়াতেও পরিবর্তন আনে।

🌊 নিম্নস্তরের জেট প্রবাহ (Low-Level Jet Streams)

🔹 সোমালি জেট প্রবাহ (Somali Jet Stream)

এটি ভারত মহাসাগরের উপর নিম্নস্তরের বায়ুপ্রবাহ,
যা সোমালিয়া ও আরব সাগরের কাছে উৎপন্ন হয়।

গ্রীষ্মকালে এটি দিক পরিবর্তন করে আর্দ্র বাতাস ভারতে নিয়ে আসে,
ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ত্বরান্বিত হয়।

যখন এই প্রবাহ পূর্ব দিকে এগোয়, তখন এটি ভারতের উপর আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে
ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ায়।

এটি মৌসুমী বায়ুর নিম্নচাপ অঞ্চল সৃষ্টি ও বৃষ্টিবণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


🔹 আফ্রিকান পূর্বীয় জেট প্রবাহ (African Easterly Jet – AEJ)

এটি পশ্চিম আফ্রিকার নিচু বায়ুমণ্ডলে গঠিত হয়।
সাহারা মরুভূমির গরম বাতাস ও গিনি উপসাগরের আর্দ্র বাতাসের তাপমাত্রার পার্থক্য থেকেই এর সৃষ্টি।

  • উচ্চতা: প্রায় ৩ কিলোমিটার
  • গতি: ৪০–৬০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত
  • এটি গ্রীষ্মকালে উত্তর দিকে সরে যায় এবং আগস্টে সর্বাধিক শক্তিশালী হয়।

এই প্রবাহের সঙ্গে ক্রান্তীয় তরঙ্গ (Tropical Waves) সৃষ্টি হয়,
যা অনেক সময় ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে (Tropical Cyclone) পরিণত হতে পারে।

যদি এই জেট প্রবাহ স্বাভাবিক অবস্থান থেকে দক্ষিণে সরে যায়,
তাহলে ঘূর্ণিঝড় গঠনের প্রবণতা কমে যায়।


🔹 বাধা জেট প্রবাহ (Barrier Jet)

এগুলো সাধারণত পর্বতমালার বায়ু-বাধা প্রান্তে তৈরি হয়।
পর্বতের ঢালে বায়ু প্রবাহ বাধা পেয়ে সমান্তরালভাবে শক্তিশালী বাতাসের ধারা সৃষ্টি করে।

উদাহরণ:
সিয়েরা নেভাদা পর্বতমালা বরাবর প্রবাহিত সিয়েরা বাধা জেট (Sierra Barrier Jet)। 

এ ধরনের জেট প্রবাহ সাধারণত শীতল ঋতু (অক্টোবর–এপ্রিল)-তে দেখা যায় এবং প্রায়শই ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে।


🔹 উপকূলীয় নিম্নস্তরের জেট (Coastal Low-Level Jet)

এগুলো স্থলভাগ ও সাগরের তাপমাত্রার তীব্র পার্থক্য থেকে তৈরি হয়।
ফলে উপকূল বরাবর প্রবল বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়।

এগুলো সমুদ্রের উচ্চচাপ ও স্থলের নিম্নচাপের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল।


🔹 উপত্যকার প্রস্থান জেট (Valley Exit Jet)

এগুলো উপত্যকা থেকে সমভূমির দিকে প্রবাহিত প্রবল বাতাস,
যা সাধারণত রাতের দিকে তৈরি হয়।

বাতাস নিচে নামতে নামতে গতি পায় এবং
প্রায় ২০ মিটার প্রতি সেকেন্ড (৪৫ মাইল/ঘণ্টা) গতিতে প্রবাহিত হতে পারে।

এই প্রবাহ বায়ু দূষণ কমাতে সাহায্য করে,
কারণ এটি উপত্যকার ভেতরের দূষিত বাতাসকে বের করে দেয়
এবং উপত্যকা অঞ্চলে বায়ুর উল্লম্ব মিশ্রণ (Vertical Mixing) ঘটায়।


জেট প্রবাহের নাম

উচ্চতা (কিমি)

গতি (কিমি/ঘণ্টা)

প্রধান ভূমিকা

উপউষ্ণ পশ্চিমী জেট

10–16

150–300

মৌসুমী বায়ুর আগমন-প্রস্থান

মেরু ফ্রন্ট জেট

7–12

200–250

মধ্য অক্ষাংশের ঘূর্ণিঝড়ের নিয়ন্ত্রণ

ক্রান্তীয় পূর্বীয় জেট

12–17

140

গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ুর শক্তিবৃদ্ধি

মেরু রাত্রি জেট

50

স্তরোস্ফিয়ারীয় গতি ও জলবায়ু সংযোগ

সোমালি জেট

1–3

60–80

আর্দ্রতা সরবরাহ ও মৌসুমী বৃষ্টিপাত

আফ্রিকান পূর্বীয় জেট

3

40–60

ক্রান্তীয় তরঙ্গ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি

বাধা/উপত্যকা জেট

নিচু স্তর

পরিবর্তনশীল

স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ


 

No comments:

Post a Comment